E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ২০ সংখ্যা / ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ / ১৫ পৌষ, ১৪২৮

তেভাগা লড়াইয়ের ঐতিহ্য স্মরণে রেখে সংগঠন গড়ে তোলো

পার্টির জলপাইগুড়ি জেলা সম্মেলনের আহ্বান

সঞ্জিত দে


জলপাইগুড়ি জেলা সম্মেলন শুরুর পূর্বে প্রতিনিধিদের ‍‌মিছিল। রয়েছেন সুজন চক্রবর্তী।

পার্টির গণভিত্তিকে আরও শক্তিশালী ও প্রসারিত করে মানুষের স্বার্থে ধারাবাহিকভাবে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সময় ও পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে সাজুয্য রেখে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করতে হবে, সেইসঙ্গে আদায়যোগ্য দাবিতে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের জনবিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে জনমানসে পার্টির প্রভাবকে সুদৃঢ় করতে হবে। সিপিআই(এম) জলপাইগুড়ি জেলা ২৫তম সম্মেলনে নেতৃবৃন্দের ভাষণে এবং প্রতিনিধিদের আলোচনায় এই প্রত্যয়ই ধ্বনিত হয়েছে। গত ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর ধূপগুড়িতে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলন উপলক্ষে ধূপগুড়ি শহরের নামকরণ করা হয়েছিল তেভাগা ঐতিহ্য নগর এবং সম্মেলন মঞ্চ কমিউনিটি হল নামাঙ্কিত হয়েছিল বাবুলাল গোপ মঞ্চ।

দু’দিনের এই সম্মেলন পরিচালনা করেন জিয়াউল আলম, মোক্তাল হোসেন, হরিহর রায় বসনীয়া, আশিস সরকার, রীনা সরকার, দিল কুমার ওরাওঁকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমণ্ডলী।

সম্মেলনের রক্তপতাকা উত্তোলন করেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মৃদুল দে। শহিদ বেদিতে মাল্যদান করেন মৃদুল দে সহ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অনাদি সাহু, পার্টির জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য,রাজ্য কমিটির সদস্য সায়নদীপ মিত্র সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও প্রতিনিধিরা। এরপর সম্মেলন স্থল থেকে প্রতিনিধিদের একটি মিছিল ধূপগুড়ি বাজার-বাসস্ট্যান্ড ও থানা রোড হয়ে সম্মেলন স্থলে ফিরে আসে।

সম্মেলন উদ্বোধন করেন অনাদি সাহু। তিনি তাঁর ভাষণে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের জনবিরোধী-অগণতান্ত্রিক নীতি ও কার্যকলাপের পাশাপাশি বিজেপি সহ হিন্দুত্ববাদীশক্তির হিংসাত্মক বিভেদের রাজনীতি, কেন্দ্রের উদারীকরণ-বেসরকারিকরণের উদ্যোগ ইত্যাদির কথা তুলে ধরেন। এছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন এরাজ্যে তৃণমূলের জমানায় কীভাবে রাজ্যের শিল্পায়ন ও উন্নয়ন স্তব্ধ হয়েছে,বেকার সমস্যা তীব্র হয়েছে এবং দুর্নীতি, সন্ত্রাস, গণতন্ত্রহরণের মতো ঘটনায় গরিব সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা বিপন্ন হচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বেলেন, বর্তমান সময়ে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন ঘটছে তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করতে হবে। পার্টি সংগঠনকে সজীব ও সক্রিয় করে জনগণের দাবিদাওয়া নিয়ে অবিরাম লড়াই-আন্দোলন জারি রাখতে হবে।

সম্মেলনে খসড়া সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশ করেন বিদায়ী জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য। তিনি তাঁর বক্তব্যে অন্যান্য বিষয়ের সাথে উল্লেখ করেন, জেলার নাগরাকাটা ব্লকের মাথা চুলকায় তেভাগার লড়াইয়ে ১৪ জন শহিদ হয়েছিলেন। সেই সংগ্রামের এবছর ৭৫ বছর পূর্তি। তাই ঐতিহাসিক তেভাগার লড়াইয়ের ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করে লড়াই-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পার্টিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

সম্মেলনে আয়-ব্যয়ের হিসাব পেশ করেন জিয়াউল আলম।

প্রতিবেদনের উপর আলোচনায় ৪০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। তাঁরা ১০০ দিনের কাজ সহ পঞ্চায়েতের বিভিন্ন কাজে নানা দুর্নীতি, গ্রামাঞ্চলে আরএসএস-এর বিভেদমূলক কার্যকলাপ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। তাঁরা বলেছেন,গত বিধান সভা নির্বাচনে সর্বশক্তি নিয়ে লড়াইয়ে নামা সত্ত্বেও তৃণমূলের অর্থ, পেশিশক্তি ও মিথ্যা প্রলোভন, আরেকদিকে বিজেপি’র উগ্র মেরুকরণের প্রচার যেমন বামপন্থীদের বিরুদ্ধে গেছে, তেমনি বামপন্থীদের সঙ্গে অন্য দলের জোট অনেকে মেনে নিতে পারেনি বলে বামপন্থীরা মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। তাছাড়া পার্টি সংগঠনেও দুর্বলতা ছিল। এভাবেই সাংগঠনিক ত্রুটির কথা উল্লেখ করে ফের লড়াইয়ের ময়দানে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রতিনিধিরা। ব্যাপক ছাপ্পা, জালিয়াতি, লুটের মাধ্যমে ভোট প্রহসন করে সদ্যসমাপ্ত কলকাতা কর্পোরেশনের ক্ষমতা দখল নিয়েছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। তা সত্ত্বেও বামপন্থীদের পক্ষে যে ভাবে মানুষ সমর্থনে এসেছে তাতে আশার সঞ্চার হয়েছে বলে অনেক প্রতিনিধি উল্লেখ করেছেন। চা বাগান, বনবস্তি, গ্রামীণ কৃষি এলাকা এবং শহরের মধ্যবিত্ত নাগরিক জীবনের সমস্যা, চাহিদা ও দাবি নিয়ে আরও বেশি বেশি করে লড়াই-আন্দোলনের পরিকল্পনা গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছেন অনেক প্রতিনিধি। পার্টি সংগঠন পরিচালনায় নেতৃত্বের আরও কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের দাবিও করেছেন প্রতিনিধিরা।

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ২৫ ডিসেম্বর বিকালে ধূপগুড়ি কমিউনিটি হল প্রাঙ্গণে একটি বুক স্টল উদ্বোধন করেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী এবং সেদিনই সন্ধ্যায় সম্মেলনকে সফল করার আহ্বান জানিয়ে বৈরাতীগুড়ি হাই স্কুলের সামনে থেকে বিরাট মশাল মিছিল সংগঠিত হয়েছে। মিছিলে সুজন চক্রবর্তী সহ অনান্য নেতৃত্ব অংশ নেন।

সম্মেলনে জেলার ১৩টি এরিয়া কমিটির ২৫১ জন প্রতিনিধি, ৪৪ জন দর্শক, ৬ জন বিশেষ প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনে রাজ্যে আক্রান্ত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা,রাজ্য ভাগের চক্রান্ত ব্যর্থ করা, বিএসএফ-র ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতিবাদে,কৃষিপণ্যের লাভজনক দামের দাবিতে, বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে সহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।

সন্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বক্তব্য রাখেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির দুই সদস্য মৃদুল দে, সুজন চক্রবর্তী এবং রাজ্য কমিটির সদস্য সায়নদীপ মিত্র।

সন্মেলন থেকে সর্বসম্মতিক্রমে ৪০ জনের জেলা কমিটি গঠিত হয়। সলিল আচার্য সম্পাদক হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন।

এছাড়া পার্টির রাজ্য সম্মেলনের জন্য ৮ জন প্রতিনিধি এবং ৫ জন বিকল্প প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন।

সিপিআই(এম) জলপাইগুড়ি জেলা সম্মেলনকে কেন্দ্র করে গোটা ধূপগুড়ি শহর লাল পতাকায় সেজে উঠেছিল। এছাড়া ধূপগুড়ি বাজারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছিল।