৫৯ বর্ষ ২০ সংখ্যা / ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ / ১৫ পৌষ, ১৪২৮
দেশরক্ষার জন্য হিন্দুত্ববাদীদের শাসনক্ষমতা থেকে উৎখাত করতেই হবে
কমরেড নন্দেশ্বর তালুকদারের জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানে সীতারাম ইয়েচুরি
কমলেশ গুপ্ত
ব্রিটিশ শাসকেরা যেভাবে দেশের উত্তাল স্বাধীনতা আন্দোলনের জোয়ারে ভেসে গিয়েছিল, সেভাবেই হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রসর বর্তমান শাসকগোষ্ঠীকে ক্ষমতা থেকে অপসারিত করতেই হবে। দেশের সংবিধান, গণতান্ত্রিক পরম্পরা যেভাবে এরা ধ্বংস করছে তেমনি লুট করছে দেশের অর্জিত সম্পদ। দেশকে রক্ষা করতে এদের অপসারিত করতে না পারলে ভবিষ্যৎ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। এভাবেই সিপিআই(এম)-র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি তাঁর বক্তব্যে বিজেপি সরকারের চরিত্র বর্ণনা করেন স্বাধীনতা আন্দোলনের আপসহীন সংগ্রামী, অসমের কমিউনিস্ট আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব এবং রাজ্যে সিপিআই(এম)’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নন্দেশ্বর তালুকদারের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানে।
শতবার্ষিকীর কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল ২৬ ডিসেম্বর গুয়াহাটির মাছখোয়া প্রাগজ্যোতি সাংস্কৃতিক প্রকল্পে।
উল্লেখযোগ্য যে, ১৯২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর নন্দেশ্বর তালুকদারের জন্ম হয়েছিল অসমের বজালি মহকুমার মরিপুর গ্রামে এক ধনী পরিবারে। তাঁর শতবর্ষ উপলক্ষে সমগ্র রাজ্যে পার্টির উদ্যোগে সভা-সমাবেশ আয়োজন করে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা এবং অবদান, রাজ্যে সিপিআই(এম) প্রতিষ্ঠা এবং সম্প্রসারণে তাঁর নেতৃত্বকারী ভূমিকা এবং কৃষক আন্দোলনে তাঁর অবদান সম্পর্কে আলোচিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে আলোচ্য বিষয় ছিলঃ ‘‘ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্টদের ভূমিকা এবং বর্তমান সময়’’। বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ড. হীরেন গোহাঁই, বর্ষীয়ান কমিউনিস্ট নেতা অবনী বরঠাকুর প্রমুখ। শতবর্ষ উদ্যাপন সমিতির সভাপতি হেমেন দাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মুখ্য বক্তা হিসেবে উপস্থিত থেকে ইয়েচুরি বলেন, স্বাধীনতার পূর্বে যেমন কমিউনিস্টরা দলের লক্ষ্যে এবং উদ্দেশ্যে অবিচল থেকে দেশ সেবায় কাজ করেছিলেন, তেমনি স্বাধীনোত্তরকালেও সেই কাজ অব্যাহত আছে। অব্যাহত আছে সর্বসাধারণের পক্ষে মাথা উঁচু করে লড়াই করা। নন্দেশ্বর তালুকদারের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, সমস্ত জীবন তিনি কমিউনিস্ট চিন্তাধারা অনুসরণ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন ১৯২০ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠনের কথা, ১৯২১ সালে আহমেদাবাদে কংগ্রেস অধিবেশনে পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি উত্থাপনের কথা। উল্লেখ করেন ১৯২৫ সালে আরএসএস এবং পরবর্তীকালে মুসলিম লিগ গঠন এবং তাদের কাজের কথা। আরএসএস’র হিন্দুরাষ্ট্র এবং মহম্মদ আলি জিন্নার মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিসহ এক জটিল সন্ধিক্ষণেও কমিউনিস্ট দল নিজের মতাদর্শ থেকে সামান্য পরিমাণেও বিচ্যুত না হওয়ার কথা উল্লেখ করে ইয়েচুরি বলেন, স্বাধীন ভারতের রাজ্য গঠনের সময়ও বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল কমিউনিস্ট পার্টি। ভারত বিভিন্ন ভাষা, জনগোষ্ঠী এবং ধর্মের মানুষের বাসস্থান। তারজন্যই ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনে কমিউনিস্টরা জোর দিয়েছিল। বর্তমান সরকার ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গো সুরক্ষা, লাভ জেহাদ প্রভৃতির নামে এমন একটি অবস্থান সৃষ্টি করা হচ্ছে যেখানে সাধারণ নাগরিকের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। সরকারের জনবিরোধী নীতি অথবা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা ব্যক্তিদের দেশদ্রোহিতার আইনে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। মূল্য বৃদ্ধি, দারিদ্র্য, বেকার সমস্যা সমাধানের দাবি যখন জোরদার হচ্ছে, তখনই হিন্দুত্ব, গো সুরক্ষা ইত্যাদি নিয়ে চিৎকার বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংসদে কেবল হুলুস্থুল - সেই সুযোগে জনবিরোধী আইন পাস করিয়ে নেওয়া, স্বতন্ত্র নির্বাচন আয়োগ, সিবিআই, ইডি প্রভৃতিকে সরকার হাতের পুতুল করে রেখেছে বলে ইয়েচুরি অভিযোগ করেন। এই পরিস্থিতিতে ‘সরকার হটাও দেশ বাঁচাও’ মনোভাব নিয়ে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ড. হীরেন গোহাঁই কমিউনিস্ট নেতা নন্দেশ্বর তালুকদারকে স্মরণ করে বক্তব্য রাখেন।
জন্মশতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠানে প্রকাশিত হয়েছে একটি স্মারক গ্রন্থ। উন্মোচন করেছেন অবনী বরঠাকুর। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই, সিপিআই(এম এল) সহ বিভিন্ন বামপন্থী দলের নেতৃবৃন্দ। উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস দলের প্রাক্তন সাংসদ বলীন কুলি সহ বিভিন্ন দলের নেতারা। পার্টির প্রবীণ নেতা উদ্ধব বর্মন, সঙ্গীত শিল্পী সুদক্ষিণা শর্মা, নিবন্ধকার অনন্ত কলিতা, সিপিআই(এম) বিধায়ক মনোরঞ্জন তালুকদার, সাংবাদিক হাইদার হোসেন, চিত্রশিল্পী উদয়ন বিশ্বাস প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তির উজ্জ্বল উপস্থিতি এবং পার্টিকর্মী ও সমর্থকদের বিপুল উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে সর্বাঙ্গ সুন্দর করে তুলেছিল।