E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৭ বর্ষ ৪৯ সংখ্যা / ৩১ জুলাই ২০২০ / ১৫ শ্রাবণ ১৪২৭

‘আত্মনির্ভর ভারত’ থেকে ‘রিলায়েন্স ইন্ডিয়া’র পথে যাত্রা

প্রবীর পুরকায়স্থ


বিগত ৪ বছর ধরে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবসা থেকে রিলায়েন্সের যে আয় তা তারা ব্যবহার করেছিল টেলিকম ক্ষেত্রে রিলায়েন্স জিও-র ব্যবসা চালু করা ও দাঁড় করানোর মূলধন জোগানোর কাজে। আজ রিলায়েন্স জিও হলো টেলিকম শিল্পে প্রথম সারিতে থাকা ভারতীয় সংস্থা। প্রাথমিকভাবে স্বল্প খরচ, অন্য সংস্থাগুলি থেকে গ্রাহক হাতিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে পরিষেবার দাম নির্ধারণ-এর মাধ্যমে তারা অন্যান্য সংস্থাগুলিকে ততোক্ষণ পর্যন্ত ক্ষত-বিক্ষত করে গেছে যতক্ষণ না ওই সংস্থাগুলি আত্মসমর্পণ করেছে, টেলিকম শিল্পের বাজারে জিও হয়ে উঠেছে প্রশ্নাতীতভাবে প্রধানতম সংস্থা। জিও এই দাবিও করেছে যে, তাদের নেটওয়ার্ক কোনো ধরনেরই চীনা যন্ত্রপাতি ব্যবহার থেকে মুক্ত, একেবারে নিজের তৈরি, ‘সম্পূর্ণত দেশীয়’ ৫জি টেকনোলজির দ্বারা পরিচালিত। এর মধ্যে দিয়ে আমেরিকা-চীন ৫-জি বাণিজ্যযুদ্ধের আব‍‌হে একজন প্রধান অংশীদার হিসাবে জিও নিজে‍‌কে তুলে ধরেছে।

তথাপি, তেল শিল্প থেকে লুঠ করে আনা মোটা অঙ্কের উদ্বৃত্ত থাকা সত্ত্বেও রিলায়েন্স সাম্রাজ্যের ঘাড়ে ছিল বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝা। এই ঋণ মেটানোর জন্যে জিও টেলিকম নেটওয়ার্কের ঘা‍‌ড়ে চেপে তারা পরিষেবা ক্ষেত্রে নিয়ে এসেছিল একটি নতুন সংস্থা জিও ডিজিটাল। কোনোমতে কয়েক মাস চালিয়ে এই নতুন সংস্থার প্রায় ৩০ শতাংশ শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে তারা ২২ বিলিয়ন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৬২০০০ কোটি টাকা) মূলধন জোগাড় করে ফেলেছে বা সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। এই অর্থ দিয়েই তাদের বিপুল দেনার একটা বড় অংশ পরিশোধ করেছে। অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলিকে বাদ দিলেও তাদের এই সংস্থায় বিনিয়োগ করেছে ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফটের মতো ওয়েব টেকনোলজি দুনিয়ার কয়েকটি বড় মাথা। এই প্রকৌশলগত বিনিয়োগের মধ্যে আছে ফেসবুকের ৫.৭ বিলিয়ন ডলার, গুগলের ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ও মাইক্রোসফটের ২ বিলিয়ন ডলার। জিও-তে বি‍‌নিয়োগকৃত বাদবাকি ১০ বিলিয়ন ডলার এসেছে কয়েকটি ভেনচার ক্যাপিটাল সংস্থার সম্মিলিত অর্থ থেকে এবং আবুধাবি ও সৌদি আরবের আমিরি পরিবারগুলির মুক্ত তহবিল থেকে।

দাবি করলেও এই সংস্থা এখনও ঋণ মুক্ত হতে পারেনি। তবে এই নিবন্ধের বিষয়বস্তু রিলায়েন্স সাম্রাজ্যে বিনিয়োগকৃত অর্থের উৎসগুলির জটিলতা খোঁজা নয়। বরং, জিও-তে বি‍‌নিয়োগকারী ওই সংস্থাগুলি কাদের এবং আমাদের, অর্থাৎ ভারতীয়দের জন্য রিলায়েন্সের পরিকল্পনা কী কী - সেটাই এই লেখার প্রসঙ্গ।

রিলায়েন্স জিও-কে বাজারে চালানোর পরিকল্পনাগুলি সম্পর্কে আমরা যদি বুঝে নিতে চাই, তাহলে আমাদের দেখে নেওয়া দরকার তাদের সেই সমস্ত টেকনোলজি-পার্টনার কারা, যারা রিলায়েন্স জিও-তে কৌশলগতভাবে বিনিয়োগ করে চলেছে। তারা ধরেই নিয়েছে টেলিকম ব্যবসায় রিলায়েন্স জিও-ই হলো মূল চালক এবং তাদের যদি ভারতীয় উপভোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে হয় বা ভারতের ব্যবসাক্ষেত্রে ঢুকতে হয়, তাহলে রিলায়েন্স জিও-র সাথে তাদের গাঁটছড়া বাঁধতেই হবে। এই পরিষেবাগুলি হতে পারে পণ্য বিক্রয় থেকে শুরু করে ভিডিও সম্প্রসারণ, ভিডিও কনফারেন্স, টাকা-পয়সার লেনদেন বা ব্যবসাক্ষেত্রে ডিজিটাল পরিকাঠামোজনিত পরিষেবা প্রদান পর্যন্ত। কোভিড-১৯ অতিমারীর দৌলতে সাধারণ মানুষের কাছে ইন্টারনেট হয়ে উঠেছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, এবং অতিমারীর পরেও তা চলতে থাকবে। যে পথ ধরে আমরা প্রত্যেকে একে অন্যের সাথে সংযুক্ত তা এখন জিও-র নিয়ন্ত্রণাধীন। আর, সেই কারণেই বিশ্বজুড়ে চলা প্রযুক্তিক্ষেত্রের সংস্থাগুলি জিও-র একটা অংশীদারিত্ব পাওয়ার জন্যে লাইন দিয়েছে।

সাধারণ কথায় বললে, সমস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য, সমস্ত উপভোক্তার সংযোগকারী একটা প্রাথমিক নেটওয়ার্কের মালিক জিও। মাত্র ৪ বছরের মধ্যে টেলিকম শি‍‌ল্পে প্রথম সারির ভারতীয় সংস্থা হিসাবে উঠে আসার রসদ হিসাবে রিলায়েন্স যেভাবে তাদের তেল শিল্পের একচেটিয়া ব্যবসাকে কাজে লাগিয়েছিল, ঠিক সেইভাবে এখন টেলিকম শিল্পে তাদের প্রাধান্যকে রসদ হিসাবে ব্যবহার করছে নতুন একটা একচেটিয়া ব্যবসা তৈরি করার লক্ষ্যে, যে ব্যবসা এই নেওয়ার্কের মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন পরিষেবা দেবে। ৫-জি টেকনোলজির ক্ষেত্রে ও তার বাণিজ্যযুদ্ধে আমেরিকার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরূপে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে ভবিষ্যতে অন্য দেশে ৫-জি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটা জায়গা পাওয়ার দিকে তারা তাকিয়ে আছে।

কংগ্রেস থেকে শুরু করে বিজেপি পর্যন্ত - একের পর এক সরকারগুলি রিলায়েন্সকে সুযোগ করে দিয়েছে তাদের একচেটিয়া শক্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে। এমনকি, রিলায়েন্স পেমেন্ট ব্যাঙ্কের সাথে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই)’র ৭০:৩০ অনুপাতে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে ভারতের এই সর্ববৃহৎ ব্যাঙ্কের ব্যবসায় পিছনের দরজা দিয়ে ঢোকার সুযোগ পর্যন্ত করে দিয়েছে মোদী সরকার। মোদীর ‘আত্মনির্ভর ভারত’ প্রকল্পে প্রকৃত প্রস্তাবে ভারত আত্মনির্ভর হচ্ছে না, রিলায়েন্স-নির্ভর হয়ে উঠছে!

জিও-র ঘনিষ্ট সহযোগী হিসাবে পরিচিত ডিজিটাল ক্ষেত্রের একচেটিয়া সংস্থাগুলি একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চালাচ্ছে, আবার একে অপরের পরিপূরক হিসাবেও কাজ করছে। গুগল তার সার্চইঞ্জিন এবং জি-মেলের আধিপত্যের জন্যে ব্যক্তিগতস্তরে ই-পরিষেবা প্রদানের বাজারে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। ডিজিটাল ক্ষেত্রের বিজ্ঞাপন থেকে আয়ের একটা বিপুল অংশ পাওয়ার জন্য তারা এই ক্ষেত্রটিকে ব্যবহার করে। এই বিজ্ঞাপন থেকে আয়ের ক্ষেত্রে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে ফেসবুকের সাথে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে গুগলের বিজ্ঞাপন থেকে আয়ের একটা বড় অংশ আসে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম থেকে। হোয়াটসঅ্যাপ থেকে তাদের কাছে ব্যবসায়িক প্রস্তাব থাকলেও, একটা বড় মাপের ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এখনও অনেক জায়গা আছে। পার্সোনাল কম্পিউটারে ব্যবহারযোগ্য সফটওয়্যারের বাজারে মাইক্রোসফটের আধিপত্য। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রের জন্যেও একটা বড়মাপের ই-পরিষেবা তারা গড়ে তুলেছে। এক্ষেত্রে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে এই ই-পরিষেবা বাজারের প্রধান অংশীদার অ্যামাজনের সাথে। গুগলও বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষেত্রে ই-পরিষেবা দেয়, তবে মাইক্রোসফট ও অ্যামাজনের থেকে তারা বেশ কিছুটা পিছিয়ে আছে।

নিজস্ব উপভোক্তা বা ব্যবসায়িক সংস্থাগুলির কাছে পৌঁছাতে এই সমস্ত কোম্পানির টেলিকমক্ষেত্রের পরিকাঠামোর প্রয়োজন। এদের প্রত্যেকেই যেহেতু লগ্নি ও আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থার মতো নতুন নতুন ক্ষেত্রে চেষ্টা করছে ও প্রবেশ করছে, তাই শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো নয়, যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা উপভোক্তাদের স্বার্থরক্ষা করে ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে তার সাথেও ‘দর কষাকষি’র একটা উপায় তাদের দরকার। এক্ষেত্রে রিলায়েন্স তাদের দু’টি সুবিধাই দিচ্ছে। বিপুল আয়তনের টেলিকম পরিকাঠামো তাদের আছে তা শুধু নয়, দেশে নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থাকে নতজানু করার ক্ষমতাও আছে। এক্ষেত্রে, জিও পেমেন্ট ব্যাঙ্কের মতো চালু থাকা রিলায়েন্সের আর্থিক লেনদেনের পরিকাঠামোকে ব্যবহার করে গুগল তার ‘গুগল পে’ নিয়ে এবং ফেসবুক তার তথাকথিত ডিজিটাল টাকাকড়ির ব্যবস্থা নিয়ে ভারতের বাজারে ঢোকার জন্য একটা খিড়কির দরজা খুঁজে পেতে পারে।

খুচরো ব্যবসার ক্ষেত্রে, রিলায়েন্স রিটেলের প্রযুক্তিগত সহযোগীরা তার প্রতিদ্বন্দ্বী নয়; প্রতিদ্বন্দ্বী হলো অ্যা মাজন ও ওয়ালমার্ট-ফ্লিপকার্ট। এই বাজার ইতিমধ্যে ভিড়ে ঠাসা; অনেক সংস্থাই ই-কমার্স ব্যবসায় প্রবেশ করছে। এখানেও রিলায়েন্সের দর্শন খুবই সাধারণ - যথেষ্ট বড় চেহারার ব্যবসা তৈরি করো, কিছু সময়ের জন্য ক্ষতির মুখে পড়লেও দাম কমিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের ক্ষত-বিক্ষত করো; একবার তারা আত্মসমর্পণ করলে, দাম বাড়িয়ে দাও; ঠিক যেমনটা করেছে টেলিকমক্ষেত্রের বাজারে। ধীরুভাইয়ের সময় থেকে এই নীতি সফলভাবে পরীক্ষিত। এর জন্য প্রয়োজন প্রচুর অর্থ এবং সরকার ও নিয়ন্ত্রকদের সহযোগিতা। এক্ষেত্রে, কংগ্রেস এবং বিজেপি - দু’দিক থেকেই রিলায়েন্স আশীর্বাদ পেয়েছে।

রিলায়েন্সের ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় এক্ষেত্রে নতুন বিষয় হলো ৫-জি নেটওয়ার্ক প্রসঙ্গে একটি কথা - সম্পূর্ণত দেশীয় পদ্ধতিতে নিজেদের তৈরি করা। যেনতেন অবস্থা থেকে ৫-জি ব্যবস্থায় একা একাই ঢুকতে পারবে এমন ডিজিটাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার উপযোগী প্রযুক্তি তৈরি করতে রিলায়েন্সের যে সক্ষমতা আছে, তার কোনো প্রমাণ নেই। পেট্রোলিয়ম ক্ষেত্রে, তারা সর্বদা পণ্য হিসাবে প্রযুক্তি কিনেছে, নিজেরা তৈরি করেনি বললেই চলে। তাদের গোটা ৪-জি নেটওয়ার্ক বানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানি স্যামসাঙ, যারা ৫-জি নেটওয়ার্কের বাজারে হুয়াউই-র প্রতিদ্বন্দ্বী। জিও-র সাম্প্রতিককালের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আছে কুয়ালকম নামের সংস্থাটিও, যারা ওয়ারলেস চিপস উৎপাদনের বাজারে হুয়াউই-র মুখ্য প্রতিদ্বন্দ্বী। জিও-তে তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ মাত্র ৯৭ মিলিয়ন ডলার - জিও-তে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগকারী টেকনোলজির বাজারের অন্যান্য সংস্থাগুলির তুলনায় যথেষ্ট কম। জিও-র ‘সম্পূর্ণত দেশীয়’ ৫-জি প্রযুক্তি গড়ে তোলার অংশীদার কী এই কুয়ালকম ও স্যামসাঙ?

হুয়াউই, কুয়ালকম, স্যামসাঙ-৫জি’র প্রযুক্তির বাজারে এদের প্রত্যেকেরই বহু পেটেন্ট আছে। আমরা যা জানি, রিলায়েন্সের এই ধরনের কিছু নেই; যদি না মেধাসত্ত্বের কারণে কিছু ছোট ছোট সংস্থাকে তারা কিনে নিয়ে থাকে। রিলায়েন্সের শক্তি হলো বিপুলায়তন বাজার তৈরি করা এবং তার মধ্যে দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে লাভদায়ক উৎপাদনে পৌঁছানো যাতে তাদের আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকে। প্রযুক্তিবাজারের ব্যবস্থা অন্য ধরনের। নতুন নতুন প্রযুক্তি তৈরি হবে। নতুন নতুন এমন কিছু প্রয়োজন তৈরি হবে যেগুলির অস্তিত্ব এখনও পর্যন্ত নেই; প্রযুক্তির হাত ধরেই সেই প্রয়োজনগুলির সৃষ্টি। পার্সেনাল কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, সার্চ ইঞ্জিনের কথাই ভাবা যাক। এই সমস্ত ক্ষেত্রে প্রযুক্তির হাত ধরেই বাজার এসেছিল। তারপর এসেছিল উৎপাদনের পরিমাণের প্রসঙ্গটি। উৎপাদনের পরিমাণ নির্ধারণ করে প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো - যেটা রিলায়েন্সের বাজার ধরার পরিকল্পনা - যেনতেন অবস্থা থেকে ওই প্রযুক্তিকে গড়ে তুলতে পারে না।

মোবাইল নেটওয়ার্কে রিলায়েন্সের যে আধিপত্য তা তারা ব্যবহার করছে ৫-জি ব্যবস্থার ক্ষেত্রের একমাত্র সংস্থা হয়ে ওঠার লক্ষ্যে। দীর্ঘদিন আগেই বিএসএনএল-কে ছেঁটে ফেলা হয়েছে। এখন ভোডাফোন ও আইডিয়া সেই পথেই চলেছে। ভারতী টেলিকম তার ঘাড়ে চেপে থাকা ঋণ ও আগের না দেওয়া লাইসেন্স ফি-র বোঝায় ইতিমধ্যে জ্বলেপুড়ে মরছে; ৫-জি’র যে লাইসেন্স ফি হবে তাতে প্রতিযোগিতায় নামা তদের পক্ষে দুঃসাধ্য। গোটা বিশ্বে চীনের পরেই ভারতের মোবাইলের বাজার। ৫-জি ব্যবস্থায় তা‍দের যে একচেটিয়া ব্যবসা হতে চলেছে, তাকে সামনে রেখে, মার্কিন ও দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানিগুলির সাথে এবং সম্ভবত অন্যান্য সংস্থাগুলির সাথে গাঁটছড়া বেঁধে হুয়াউই ও যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী অন্যান্য চীনা সংস্থাগুলির বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে চাইছে রিলায়েন্স। গোটা বিশ্বের কাছে রিলায়েন্স সিগন্যাল পাঠাচ্ছে: ‘‘আমাদের সাথে যোগ দাও, আমরা তো‍‌মাকে জিতিয়ে দেব, তবে সেই জয় আসবে আমাদের পতাকাতলে’’। এক্ষেত্রেও আবার সেই প্রযুক্তির জন্য উৎপাদনের পরিমাণকে রসদ হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে, যা রিলায়েন্সের পরিচিত গেমপ্ল্যান।

এটা কী সাফল্য পেতে পারে? ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা মূর্খামি। রিলায়েন্স যা কল্পনা করছে, এই রূপান্তর তার থেকে অনেক অনেক আলাদা। কিন্তু, তারা যদি ব্যর্থও হয়, তাদের ব্যর্থতা থেকেই তারা অর্থ বানিয়ে নেবে। কেননা, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার তো তাদের মুঠোয় ধরা আছে। একের পর এক সরকারগুলি আম্বানিদেরকে তো সেটাই উপহার দিয়েছে। এই উপহার দেওয়ার পালা চলতে থাকবে। এমনকি, ‘সম্পূর্ণত দেশীয়’ ৫-জি প্রযুক্তি বানাতে হলেও তা চলতেই থাকবে।