E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৭ বর্ষ ৪৯ সংখ্যা / ৩১ জুলাই ২০২০ / ১৫ শ্রাবণ ১৪২৭

দুঃসময়ের চালচিত্র - শেষ পর্ব

বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়


“পসরা লুটিয়া ভাঁড়ু ভরয়ে চুপড়ী।/যত দ্রব্য লয় তার নাহি দেয় কড়ি।।” সমালোচকরা বলেন মুকুন্দ চক্রবর্তীর ‘ভাঁড়ুদত্ত’ শুধু চণ্ডীমঙ্গল কাব্যেরই নন, মধ্যযুগের সৃষ্ট সমস্ত খল চরিত্রের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। খল চরিত্র হিসেবে ভাঁড়ুদত্তের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য দুঃসময়ের চালচিত্র নয়। লিখতে বসে মধ্যযুগীয় সাহিত্য মনে পড়ে যাওয়া নেহাতই কাকতালীয়। তবে হ্যাঁ, ভাঁড়ুদত্তেরা যুগে যুগেই আবির্ভূত হন। রসেবশে বিরাজ করেন। ব্যাপক কর্মকাণ্ডে কালজয়ী হন। যুগ পালটে যায়। ভাঁড়ুদত্তেরাও নতুন রূপ ধরে ফিরে আসেন। আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে থেকে যান। যদিও পাঠক ভাঁড়ুদত্তদের ‘খল চরিত্র’ হিসেবেই চিরকাল মনে রাখে।

দুঃসময়ের চালচিত্র নামটা নেহাতই প্রতীকী। ধারাবাহিক এই লেখায় করোনাজনিত পরিস্থিতিকে ঢাল করে ‘মাস্ক’-এর আড়ালে ঢেকে ফেলতে চাওয়া এক নির্মম সময়ের নৃশংসতাকে ধরতে চেয়েছিলাম। যে নৃশংসতা ৮ নভেম্বর ২০১৬-র নোটবাতিলের সময়ের থেকে কোনো অংশে কম নয়। তখন ‘আচ্ছে দিন’-এর গল্প শোনানো প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর কাছে পঞ্চাশ দিন সময় চেয়েছিলেন। গত ২৪ মার্চ রাত ৮ টায় এবার তাঁর দাবি ছিল ২১ দিন। লকডাউনের প্রথম দিন, গত ২৫ মার্চ, বুধবার তাঁর নিজের কেন্দ্রের ভোটদাতাদের এক ভিডিয়ো কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বলেন - মহাভারতের যুদ্ধে ১৮ দিনে জয়ী হয়েছিলো পাণ্ডবরা, আমরা ২১ দিনে করোনার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে জয়লাভ করবো (সূত্র-টাইমস অফ ইন্ডিয়া, নিউজ পোর্টাল, ২৫ মার্চ)।

যদিও ২৫ মার্চ রাত ১২টা থেকে আজ ৩০ জুলাই - লকডাউন, আনলকের চক্করে ১২৮ দিন বছরের হিসেব থেকে বাদ হয়ে গেছে। দুবারই মাত্র চার ঘণ্টার নোটিশে ১৩০ কোটি দেশবাসীকে ‘আচ্ছে দিন’-এর লোভ দেখিয়ে বিপথে চালিত করেছেন যিনি - তিনি অবশ্যই দেশের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর নোটবাতিল পরিকল্পনার ব্যর্থতা আজ সকলেরই জানা। তেমনই লকডাউন সংক্রান্ত ফাঁকা আওয়াজ, থালা বাজানো, মোমবাতি জ্বালানোতে আর যাই হোক, দেশে করোনা সংক্রমণ যে আটকানো যায়নি তাও সরকারি পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে প্রতিদিন। বরং দেশের একটা বড়ো অংশের মানুষকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে এই অপরিকল্পিত লকডাউন, তা আজ প্রমাণিত। এর সঙ্গে প্রতি দেশবাসীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা, বছরে ২ কোটি বেকারের চাকরি, রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পত্তি বেসরকারি না করার প্রতিশ্রুতির কথা তুলছি না। মোদী হ্যায় তো সব মুমকিন হ্যায়। মিথ্যেও সত্যি হয়।

আগামী ৫ আগস্ট দেশের প্রধানমন্ত্রী অয্যোধ্যায় রামমন্দিরের ভূমিপুজোর উদ্বোধন করবেন রূপোর ইঁট দিয়ে। আর অ-সরকারি, ধর্মীয় সেই অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচার করবে সরকারি চ্যানেল দূরদর্শন। একটু পেছনে যাই। এমনি এমনিই একটু ইতিহাস ঘেঁটেনি। ঠিক এরকমই একটা বিবাদ হয়েছিলো ১৯৫১ সালে। গুজরাটের নবনির্মিত সোমনাথ মন্দিরের উদ্বোধনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো রাষ্ট্রপতি ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদকে। যা নিয়ে বিবাদ বেধেছিলো প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর সঙ্গে। যে বিবাদ না মেটায় প্রধানমন্ত্রী ২ মে, ১৯৫১ এক চিঠি লিখে জানান - এই অনুষ্ঠান কোনো সরকারি অনুষ্ঠান নয় এবং সরকারের এই বিষয়ে কিছু করার নেই। আমাদের সংবিধানের চরিত্র এবং মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় এমন কিছু করা আমাদের উচিত নয়। ১১ মে ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ ওই মন্দির উদ্বোধন করলেও তৎকালীন ভারত সরকার ওই অনুষ্ঠান থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছিল।

বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই সকালে এই লেখা যখন লিখতে বসেছি তার কিছুক্ষণ আগেই কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিসংখ্যান জানিয়েছে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ষোল লাখ। মৃত্যু হয়েছে ৩৫ হাজারের কাছাকাছি। এইসব পরিসংখ্যান, সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে বিতর্কের জাল বোনা যেতেই পারে। কিন্তু তাতেও সংক্রমণ, মৃত্যু বা মানুষের বিপর্যয় আরও কিছুদিন চলবেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই আরও কিছুদিন মানে কতদিন? আর তার থেকেও বড়ো প্রশ্ন এই মহামারীকে ঢাল করে আরও কতদিন চলবে দেশবাসীকে পথে বসানোর খেলা?

গত ২৪ মার্চ রাত ৮টার ভাষণে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন - “এই সময় আমাদের সংকল্পগুলিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। সতর্কতার সঙ্গে প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হবে।” ১২ মে সন্ধেয় প্রধানমন্ত্রী জানান - “এখন একটাই রাস্তা, আত্মনির্ভর ভারত। রাষ্ট্র হিসেবে আমরা বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে। এই ভাইরাস থেকে এগোনোর একটাই উপায়, আত্মনির্ভর ভারত। এটা একটা সুযোগও।”

সুযোগের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাকা সুযোগসন্ধানীরা চিরকালই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন। সেটা জানা। পৌষমাস আর সর্বনাশ-এর উদাহরণ বহুল ব্যবহৃত হলেও এক্ষেত্রে ওর চেয়ে ভালো উপমা আর কিছু হতে পারেনা। দেশের শ্রমজীবী, খেটে খাওয়া মানুষের সর্বনাশের দিনে কারা ধনী থেকে আরও ধনী হলেন, লাফিয়ে লাফিয়ে ধনীদের তালিকায় ওপরের দিকে উঠে এলেন তাও তো সকলেরই জানা। দেশবাসীকে করোনা দেখিয়ে, লকডাউনকে ব্যবহার করে কী কী করা হয়েছে তার তালিকা বড়ো লম্বা। ‘আলপিন টু এলিফ্যান্ট’ - ‘রামমন্দির টু স্ট্রাটেজিক সেল’, ‘প্রোপাগান্ডা টু হেট স্পিচ’, ‘বিজেপি-আরএসএস-তৃণমূল’ - সে তালিকা থেকে নিস্তার নেই কারোরই। ক্রোনোলজি না বুঝতে পারলে তিনি আবার ভারতবাসী কিসের?

সচেতনভাবেই বিজেপি-আরএসএস-তৃণমূল এই তিন সংগঠনকে এক পঙ্‌ক্তিতে ফেলা। কারণ এদের মধ্যে পার্থক্য নেই বিন্দুমাত্র। সবটাই চলে ‘ছিলো রুমাল, হয়ে গেল বিড়াল’-এর ‘হযবরল’ তত্ত্বে। এদের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের সবটুকু জুড়েই প্রচারসর্বস্বতা, অপকৌশল। মানুষকে বিভ্রান্ত করার ছক। ঝাঁ চকচকে প্রচারের মোড়কের আড়ালে থাকা চক্রান্তটা গিলে ফেলার আগে বোঝা যায়না। বদহজম হয় পরে। বারবারই এই ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেন দেশবাসী, রাজ্যবাসী। আর এই ছক মেনেই ‘সারদা কাণ্ডে সবথেকে সুবিধাভোগী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়’ বলা, চিটফান্ড দুর্নীতিতে অভিযুক্ত এবং বেশ কিছুদিন জেলে থাকা, সাসপেন্ডেড তৃণমূল সাংসদ আচমকা আবার কখন তৃণমূলের মুখপাত্র হয়ে যান বুঝতেই পারা যায় না। একসময় তৃণমূল থেকে মানুষকে সরে আসার আবেদন জানানো ব্যক্তিই যখন ঘুরেফিরে দলের মুখপাত্র হন, তখন পুরোনো সব ঘটনাই যে নিছক ‘আই ওয়াশ’ ছাড়া আর কিছু ছিলনা তা স্পষ্ট হয়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রী তো কবেই বলে দিয়েছেন - ‘যা গেছে তা গেছে’। আর চিটফান্ড কাণ্ডের তদন্তও নড়াচড়া করে তিথি-নক্ষত্র, দিন-ক্ষণ বিচার করে। এই রাজ্যের বুকে দাঁড়িয়েই তো কেউ বলে গেছিলেন - ৯০ দিনের মধ্যে চিটফান্ড কাণ্ডের দোষীদের শাস্তি হবে!!! কেউ ৯০ দিন চায়, কেউ ৫০ দিন চায়, কেউ ২১ দিন চায় - সময় চলে যায়। ছুটির অপেক্ষায় থাকা বেচারা ফটিক শুধু বলে যায় -‘এক বাঁও মেলে না, দো বাঁও মেলে না।’

এখন যেহেতু ‘রাজনীতি করার সময় নয়’ তাই এসব কথা বলা এখন হয়তো উচিত নয়। আপনিও ঠিক এই লাইনটা নিয়ে যখন দ্বিধায় ভুগছেন, উচিত অনুচিতের দ্বন্দ্ব নিয়ে ভেবে অনেকটা সময় ব্যয় করে ফেলছেন, তখনই ‘পালঘরের সাধুদের পিটিয়ে মেরেছে বামপন্থীরা’ অথবা ‘মুসলিমদের হাতে হিন্দু সাধু হত্যা’ গোছের মেসেজ আপনার হোয়াটস অ্যাপে ঢুকে গেছে…

ঘটনাটা এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখের। ওইদিন গভীর রাতে পালঘরের গড়চিঞ্চোলী গ্রাম দিয়ে একটি গাড়ি যাবার সময় স্থানীয় মানুষ গাড়িটিকে আটক করে। মুহূর্তে গুজব রটে যায় এঁরা ছেলেধরা এবং শিশুদের শরীর থেকে কিডনি সহ অন্যান্য প্রত্যঙ্গ বের করে নেয়। এরপরই শুরু হয় গণপিটুনি। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ এলে পুলিশকেও আক্রমণ করে ক্ষিপ্ত জনতা। গাড়ি ভাঙচুর হয়। ঘটনায় গাড়ির চালক এবং দু’জন সাধু মারা যান। এই ঘটনা নিয়ে মাঠে নেমে পড়েন সম্বিত পাত্র, সুনীল দেওধররা। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে প্রচার শুরু করা হয় বামপন্থীদের বিরুদ্ধে। কারণ ঘটনাটা যে অঞ্চলের সেই বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক সিপিআই(এম)-এর। ঘটনাচক্রে তফশিলি অধ্যুষিত ওই গ্রামে কোনো মুসলিমের বসবাস নেই। এরপর সর্বভারতীয় কৃষক সভার সভাপতি ডঃ অশোক ধাওয়ালে বিজেপি’র বিরুদ্ধে মামলা করার কথা বলেন এবং জানান - সম্বিত পাত্র এবং সুনীল দেওধর শুধুমাত্র এই ঘটনার সাম্প্রদায়িকীকরণ করছেন তাই নয়, মিথ্যে বলছেন। যেখানে এই গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে সেই গড়চিঞ্চোলী গ্রামের সরপঞ্চের নাম চিত্রা চৌধুরী এবং তিনি বিজেপি’র নেত্রী। এই ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে বহু বিজেপি কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরপর বিজেপি’র প্রচার, ট্যুইটার ট্রেন্ডিং থেমে যায়। প্রায় একইভাবে কেরালার হাতি হত্যা নিয়ে ট্রেন্ডিং করানো হয়েছিলো। যেকথা আগের দুঃসময়ের চালচিত্রে বলা আছে।

এ তো গেল প্রোপাগান্ডা। এবার একটু স্ট্র্যাটেজিক সেল-এ আসি। সবকিছুই তো দেশকে তিলে তিলে পঙ্গু করে দেবার, দেশের বড়ো বড়ো কর্পোরেট হাউসকে আরও বড়োলোক করার স্ট্র্যাটেজি মেনেই। বিষয়টা চলছিলো অনেকদিন ধরেই। অবশেষে গত সোমবার ২৭ জুলাই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন - ২৩ টি পাবলিক সেক্টর কোম্পানির বিলগ্নিকরণে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সবুজ সঙ্কেত পাওয়া গেছে। আপাতত সেইসব কোম্পানি বিক্রির বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। ওইদিন অর্থমন্ত্রী আরও জানান - ২০২০-২১ আর্থিক বছরে কেন্দ্রীয় সরকার মোট ২.১০ ট্রিলিয়ন টাকা বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার মধ্যে ১.২০ ট্রিলিয়ন টাকা আসবে পাবলিক সেক্টরের বিলগ্নিকরণ থেকে। বিভিন্ন আর্থিক সংস্থার বিলগ্নিকরণ থেকে আসবে বাকি ৯০ হাজার কোটি টাকা। ‘আচ্ছে দিন’ আনতে, ‘আত্মনির্ভর’ ভারত গড়তে গত পাঁচ বছরে ২,৭৯,৬২২ কোটি টাকার বিলগ্নিকরণ করা হয়ে গেছে। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২,৭৭,১৬৬ কোটি টাকা। এই বিক্রি তারই অংশ মাত্র।

ও হ্যাঁ। বলতে ভুলে গেছি। আগামী ৫ আগস্ট দেশের প্রধানমন্ত্রী অয্যোধ্যায় রামমন্দিরের ভূমিপুজোর উদ্বোধন করবেন রূপোর ইঁট দিয়ে। আর অ-সরকারি, ধর্মীয় সেই অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচার করবে সরকারি চ্যানেল দূরদর্শন। একটু পেছনে যাই। এমনি এমনিই একটু ইতিহাস ঘেঁটেনি। ঠিক এরকমই একটা বিবাদ হয়েছিলো ১৯৫১ সালে। গুজরাটের নবনির্মিত সোমনাথ মন্দিরের উদ্বোধনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো রাষ্ট্রপতি ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদকে। যা নিয়ে বিবাদ বেধেছিলো প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর সঙ্গে। যে বিবাদ না মেটায় প্রধানমন্ত্রী ২ মে, ১৯৫১ এক চিঠি লিখে জানান - এই অনুষ্ঠান কোনো সরকারি অনুষ্ঠান নয় এবং সরকারের এই বিষয়ে কিছু করার নেই। আমাদের সংবিধানের চরিত্র এবং মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় এমন কিছু করা আমাদের উচিত নয়। ১১ মে ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ ওই মন্দির উদ্বোধন করলেও তৎকালীন ভারত সরকার ওই অনুষ্ঠান থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছিল।

এতক্ষণ ধরে যে ক্রোনোলজি মেনে লিখছিলাম সেই ক্রোনোলজিতে আরও একটা সংযোজন আছে। দেশের সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে ‘সোশ্যালিস্ট’ এবং ‘সেকুলার’ শব্দ দুটো বাদ দেবার দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন। ১৯৭৬ সালে ধারা ২(এ) অনুসারে ৪২ তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে যে দু’টি শব্দ যুক্ত করা হয়েছিলো তা বাদ দেবার দাবিতে গত ২৮ জুলাই শীর্ষ আদালতে আবেদন জানিয়েছেন আইনজীবী বলরাম সিং, করুণেশ কুমার শুক্লা এবং প্রবেশ কুমার নামক এক ব্যক্তি। ওই আবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই সংযোজন শতাব্দী প্রাচীন ভারতের ইতিহাস এবং সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই নয়। ভারতীয় ভাবধারা, ধর্মীয় অনুভুতি এবং আর্থ সামাজিক অবস্থার সঙ্গে কমিউনিস্ট তত্ত্বও কোনোভাবেই যায় না। তাঁদের মতে, কার্ল মার্কস-এর প্রভাবেই ‘সোশ্যালিস্ট’ এবং ‘সেকুলার’ শব্দগুলো সংবিধানে যুক্ত করা হয়েছে।

যদিও দুঃসময় বহমান তবু দুঃসময়ের চালচিত্রের এটাই পঞ্চম তথা শেষ পর্ব। কবি মুকুন্দ চক্রবর্তীকে ঠিক আমাদের পরিযায়ী শ্রমিকদের মতই অভাবের তাড়নায়, ‘তৈল বিনা কৈনু স্নান, করিনু উদগ পান’ করে ‘ওদনের তরে’ শিশুর কান্না মেটাতে ঘর ছাড়তে হয়েছিলো। সেকথা থাক। ভাঁড়ুদত্ত দিয়ে শুরু করেছিলাম। মঙ্গলকাব্য দিয়ে শুরু করে অমঙ্গল কাব্যের আখেটিক খণ্ড, বণিক খণ্ডর পর আবার নাহয় ভাঁড়ুদত্ততেই ফিরি। ক্ষমতার দম্ভে শেষের দিকে ভাঁড়ুদত্ত গর্জন করে বলতো - ‘হরিদত্তের ব্যাটা হয় জয়দত্তের নাতি।/হাটে লয়্যা বেচাব বীরের ঘোড়া হাতি।/তবে সুশাসিত হবে গুজরাট ধরা।…’ সব বেচে আত্মনির্ভর করতে চেয়েছিলো। যদিও ভাঁড়ুদত্তের শেষটা একটু করুণই। পাঠক সেটা জানেন। তবু বলি। ঘোড়ার পেচ্ছাপে মাথা ভিজিয়ে, মাথা কামিয়ে, ঘোল ঢেলে, দু’গালে চুনকালি মাখিয়ে, গাধার পিঠে উল্টোমুখে বসিয়ে সারা নগর ঘোরানো হয়েছিলো। আরও একবার জেগে ওঠো কালকেতু…