৫৭ বর্ষ ৪৯ সংখ্যা / ৩১ জুলাই ২০২০ / ১৫ শ্রাবণ ১৪২৭
দেশভাগ ও হিন্দু মহাসভা
গৌতম রায়
ভারত বিভাগ ও বঙ্গভঙ্গের আওয়াজ, স্বাধীনতার আওয়াজ নয়। এটা একটা হতাশা, বিক্ষোভ আর মৃত্যুর আলিঙ্গন - এটাই ছিল দেশভাগ ঘিরে কমিউনিস্ট পার্টির অবস্থান (বঙ্গভঙ্গ ও পাকিস্তান-ভবানী সেন, পৃষ্ঠা-১৯)। কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও বাংলাভাগ, ভারতভাগের ঘোরতর বিরোধী ছিল। কিন্তু দেশভাগের লক্ষ্যে মুসলিম লিগ এবং হিন্দু মহাসভা গোটা ’৪৬ সাল এবং ’৪৭ সালের শুরুর দিকে দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চালায়, অনেকটা যেন তারই পরিণতিতে জাতীয় নেতাদের সঙ্গে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা হস্তান্তরের আলাপ আলোচনাকে এই দাঙ্গা ব্যাপক আকারে প্রভাবিত করে। পরিস্থিতি ক্ষমতা হস্তান্তরের ভাবনাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। যার ফলে, কংগ্রেস নেতাদের ভিতরেও এই ধারণাই শক্তিশালী হয় যে, সাম্প্রদায়িক এবং রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানে শেষ সমাধান ভারতভাগ। মুসলিম লিগ এবং আরএসএস-হিন্দু মহাসভা দাঙ্গাকে এমনভাবে সামাজিক প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল, যার ফলে কংগ্রেস নেতৃত্বেরও মনে হয়েছিল, দেশভাগ মেনে না নিলে সাম্প্রদায়িক সমস্যার আশু কোনো সমাধান সম্ভবপর নয়। সোহরাওয়ার্দি যখন অখণ্ড বাংলার প্রস্তাব দিয়েছিলেন শরৎ বসু, আবুল হাশেম প্রমুখদের সঙ্গে মিলে কমিউনিস্ট পার্টির সর্বভারতীয় সম্পাদক পি সি যোশী এবং বাংলা কমিটির সম্পাদক ভবানী সেন একটি যুগ্ম বিবৃতি দেন। বিবৃতিটি হলোঃ ‘‘ঐক্যবদ্ধ বাংলা গঠনের সম্ভাবনা সম্পর্কে আলোচনার জন্য মহাত্মা গান্ধী ও শরৎ বসুর সঙ্গে শাহিদ সোহরাওয়ার্দি এবং মৌলবী আবুল হাশেমের যে কথাবার্তা চলছে, তাতে সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তকে পরাজিত করবার নতুন পথ খোলার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আমাদের মাথার উপর একটি নতুন ব্রিটিশ রোঁয়েদাদ ঝুলছে।আমাদের ধারণা, লন্ডনে বসে ভারতকে টুকরো টুকরো করবার ষড়যন্ত্র চলছে। এই পরিকল্পনা যদি কার্যকর হয়, তাহা হলে সেটা ভারতের সমস্ত সম্প্রদায় এবং সমগ্র জনসাধারণের ভাগ্যে একটা মহাবিপর্যয় হিসেবে নেমে আসবে। কংগ্রেস এবং লিগের চুক্তির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ বাংলা ব্রিটিশের নোংরা পরিকল্পনাকে বানচাল করে দেবে’’ (ভবানী সেনের পূর্বোক্ত পুস্তিকা। পরিশিষ্ট অংশ)।
হিন্দু মহাসভা এবং লিগ দাঙ্গা পরিস্থিতির ভিতর দিয়ে সাম্প্রদায়িক পরিবেশকে ভয়ঙ্কররকমের জটিল করে দেওয়ার পর পাঞ্জাব আর বাংলা ভাগের বিষয়টি প্রায় অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠল। বাংলায় কংগ্রেসের নিচু তলার প্রায় সবক’টি কমিটিতেই হিন্দু মহাসভা অত্যন্ত কৌশলে নিজেদের লোকেদের দ্বারা হিন্দু সাম্প্রদায়িক শিবিরকে সংখ্যাগরিষ্ঠ করে রেখেছিল। নোয়াখালির দাঙ্গার সময়কালে গান্ধীজির ঘনিষ্ঠ পরিবৃত্তের ভিতরেও হিন্দু সাম্প্রদায়িক ভাবনা কতোখানি তীব্র হয়ে উঠেছিল, তা নির্মল কুমার বসুর সেই সময়ের দিনলিপি পড়লে বোঝা যায়। কংগ্রেসের নিচুতলার কর্মীরা এইসময়ে কংগ্রেসের ভিতরে হিন্দু মহাসভার কর্মসূচি রূপায়ণে আত্মনিয়োগ করেছিল। তারা কংগ্রেসের উচ্চতর নেতৃত্বকে মুসলমানের দ্বারা হিন্দু নির্যাতনের যেসব প্রতিবেদন তখন পাঠাচ্ছিল, সেগুলি পড়লে মনে হবে, হিন্দু মহাসভার নেতৃত্বেরই রচিত কোনো প্রতিবেদন।
হিন্দু মহাসভার কৌশলে তৈরি এইসব প্রতিবেদনের ফাঁদে পা দেয় বাংলার কংগ্রেসের প্রাদেশিক নেতৃত্ব।তাঁরা কার্যত ওইসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই ’৪৭ সালের ৪ এপ্রিল বাংলাভাগের প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং সেই প্রস্তাব কার্যকর করতে নিজেদের সক্রিয় করবার সংকল্প নেয়। এর ঠিক দুই দিন পর, অর্থাৎ ৬ এপ্রিল বাংলাভাগের প্রস্তাব নেয় হিন্দু মহাসভা। অল্পদিনের ভিতরেই বাংলাভাগের সমর্থনে কংগ্রেসের প্রাদেশিক শাখার পক্ষ থেকে পুস্তিকা রচনা করেন অতুল্য ঘোষ।
এর অল্প ক’দিন পর (২৬ এপ্রিল) দিল্লিতে একান্ত বৈঠকে মিলিত হন বিধানচন্দ্র রায়, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি এবং কিরণশঙ্কর রায়। এই বৈঠকে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন: বাংলার প্রতিনিধিরা বাংলাকে বিভক্ত করবার প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপনের জন্যে জাতীয় কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে জোর সওয়াল করবেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, শ্যামাপ্রসাদ তখন কংগ্রেসের চার আনা সদস্যও ছিলেন না। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিকে প্রভাবিত করবার জন্যে পূর্ববঙ্গে উচ্চবর্ণের হিন্দু অভিজাত জমিদার (তাঁওতার) কিরণশঙ্কর আর পশ্চিমবঙ্গের উচ্চবর্ণের অভিজাত মেট্রোপলিটান হিন্দু বিধানচন্দ্র কেন হিন্দু মহাসভার শ্যামাপ্রসাদকে নিয়ে সুদূর দিল্লিতে বাংলাভাগকে নিশ্চিত করতে একান্ত বৈঠক করলেন? বাংলাভাগের প্রস্তাব যাতে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি অনুমোদন করে, সেজন্যে শ্যামাপ্রসাদকে নিয়ে, বিধানচন্দ্র এবং কিরণশঙ্কর যৌথভাবে দৌত্য পর্যন্ত করেছিলেন নেহরু, প্যাটেল, মওলানা আজাদ, জে বি কৃপালনীর কাছে।ভাইসরয় মাউন্টব্যাটেনের সাথে এই তিন নেতা দেখা করার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। ভাইসরয়ের হাতে দেওয়ার জন্যে একটি স্মারকলিপিও তাঁরা তৈরি করেছিলেন (দ্য স্টেটসম্যান, ২৮\০৪\১৯৪৭, পৃষ্ঠা-৭)।
এই বৈঠকের অব্যবহিত পরেই (৪ মে, দিনটা ছিল রবিবার) হিন্দু মহাসভার সমস্ত জেলা এবং মহকুমাকে বাংলাভাগের দাবিতে সভা-সমাবেশের নির্দেশ দেন হিন্দু মহাসভার বাংলা শাখার সভাপতি নির্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর পক্ষ থেকে নতুন প্রদেশের সঙ্গে যাতে কলকাতাকে যুক্ত রাখা হয়, সেদিকে প্রথমেই নজর দেওয়া হয়েছিল। আর সেই নতুন প্রদেশটি যাতে ভারতীয় ইউনিয়নের (এন সি চ্যাটার্জির সেই সার্কুলারে ‘হিন্দুস্থান’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছিল) অন্তর্ভুক্ত হয়, সেদিকে যাতে প্রতিটি হিন্দু মহাসভা কর্মী তীক্ষ্ম নজর রাখে, তার নির্দেশও ছিল। একদম সরাসরি হিন্দু মহাসভার নেতৃত্বে প্রকাশ্যে বাংলাভাগ চেয়ে আন্দোলনের নামে অরাজকতায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এন সি চট্টোপাধ্যায় ’৪৭ সালের ৪ মে থেকে হিন্দু মহাসভার পক্ষ থেকে (’৪৭ সালের এপ্রিল-মে মাসের দ্য স্টেটসম্যানের বিভিন্ন পাতায় এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আছে)।
বাংলাভাগের পক্ষে হিন্দু জনমত তৈরিতে তখন বিদ্যুৎগতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে হিন্দু মহাসভা। ’৪৭ সালের ৩০ এপ্রিল কলকাতার বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বারস অফ কমার্সে অত্যন্ত প্রভাবশালী শিল্পপতি এবং ব্যবসাদারদের বাংলাভাগের সমর্থনে সমবেত হতে আড়াল থেকে কলকাঠি নেড়েছিল হিন্দু মহাসভা। বেঙ্গল চেম্বারস অফ কমার্সের তৎকালীন সভাপতি ডি সি ড্রাইভার, যাঁর সাথে হিন্দু মহাসভার সম্পর্ক ছিল সুবিদিত, তিনি ছিলেন ওই সভার সভাপতি।
ওই সভাতে বাংলাভাগের প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন এন আর সরকার। দীর্ঘ ভাষণে তিনি বলেছিলেন, যদি সত্যই সোহরাওয়ার্দি ঐক্যবদ্ধ বাংলা তৈরিতে এগিয়ে আসেন, তাহলে বলতেই হয়, বিচ্ছিন্ন সেই রাষ্ট্রের কোনো ভবিষ্যৎ আছে বলে আমরা মনে করি না। এই বক্তৃতায় এন আর সরকার ’৪৭-র ২৭ এপ্রিল সোহরাওয়ার্দির বক্তৃতার সমালোচনার নাম করে ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক প্ররোচনা পর্যন্ত ছড়ান (এন আর সরকারের সম্পূর্ণ বক্তৃতাটি প্রকাশিত হয়েছিল ’৪৭ সালের ১ মে, দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকাতে, পৃষ্ঠা-৫)। এন আর সরকারের এই বক্তৃতা থেকে আর একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায় যে, আসন্ন দাঙ্গার একটা প্রস্তুতি যে হিন্দু মহাসভা সেই সময়ে বেশ ভালোভাবেই নিতে শুরু করেছে, সেই বিষয়টি। দাঙ্গার প্ররোচনা দিয়ে, দাঙ্গা বাঁধিয়ে, সেই দাঙ্গার দায় তৎকালীন প্রিমিয়ার সোহরাওয়ার্দির উপর চাপিয়ে দেওয়া যে হিন্দু মহাসভার বহু আগের ছক কষে এগোনো পরিকল্পনা, এন আর সরকারের এই বক্তৃতা থেকে তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।
হিন্দু মহাসভা প্রভাবিত ওই সভাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, কলকাতাসহ বাংলার হিন্দু প্রধান অঞ্চলগুলি নিয়ে একটি হিন্দু প্রধান অঞ্চল গঠন করতে হবে। নতুন সেই হিন্দু প্রধান অংশটি থাকবে ভারত ইউনিয়নের সঙ্গে (দ্য স্টেটসম্যান, ০১\০৫\১৯৪৭, পৃষ্ঠা-৫)।
এই সভা থেকে তাঁদের আলোচনার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যে কমিটি তৈরি হয়েছিল তা ছিল সম্পূর্ণ ভাবে আরএসএস এবং তাদের রাজনৈতিক সংগঠন হিন্দু মহাসভার দ্বারা প্রভাবিত। সেই কমিটিতে ছিলেন, এন আর সরকার, বীর বদ্রিদাস গোয়েঙ্কা, ডি এন সেন, এম এল শাহ, এস সি রায়, ডাঃ এস বি দত্ত প্রমুখ (ঐ)। বাংলার বণিক সমাজের উপর হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি যে উচ্চবর্ণের, উচ্চবিত্তের হিন্দু স্বার্থের দোহাই দিয়ে, তাদের অনেকখানি প্রভাবিত করতে তখন পেরেছিল, এই কমিটির সদস্যদের নামের তালিকা থেকেই তা পরিষ্কার।
এই বৈঠকের ঠিক আগের দিনই কংগ্রেসের প্রাদেশিক কমিটির পক্ষ থেকে বাংলাভাগের দাবিতে একটি স্মারকলিপি তৈরি করে সেটি পাঠানো হয়েছিল ভাইসরয়, নেহরু এবং প্যাটেলের কাছে। এই স্মারকলিপি এই ব্যক্তিত্বদের হাতে তুলে দিতে কালীপদ মুখোপাধ্যায় ৩০ এপ্রিল বিমানযোগে দিল্লি যান (ঐ)।
সংবিধান সভার সভাপতি ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ বাংলা এবং পাঞ্জাব ভাগকেই কেবল সমর্থন করেন তা নয়, রাজেন্দ্রপ্রসাদের সেই বক্তৃতা শুনলে মনে হবে, বুঝি বা কোনো হিন্দু মহাসভার নেতা বক্তৃতা করছেন (দ্য স্টেটসম্যান, ০১\০৫\১৯৪৭, পৃষ্ঠা-৫)।
সোহরাওয়ার্দি, আবুল হাশেম, শরৎ বসুর অখণ্ড বাংলার বিরুদ্ধতা করে, বাংলাভাগ চেয়ে প্রায় একই ভাষাতে দু’টি পৃথক বিবৃতি দেন জাতীয় কংগ্রেসের প্রাদেশিক শাখার তৎকালীন সম্পাদক সুরেন্দ্রমোহন ঘোষ এবং হিন্দু মহাসভার শ্যামাপ্রসাদ (দ্য স্টেটসম্যান, ০২\০৫\১৯৪৭, পৃষ্ঠা-৪)। গান্ধীজি কিন্তু ভারত বিভাগের ভাবনাতে কোনো অবস্থাতেই সম্মতি জানাতে পারেন নি। তাঁর সাথে ৬ মে জিন্নার একটি আলোচনা হয়। সেই আলোচনাতেও তিনি ভারত বিভাগের সিদ্ধান্তে তাঁর অনাস্থার কথা বলেন (গান্ধীজি ও জিন্নার দেশভাগ ঘিরে এই পর্যায়ের আলোচনার বিস্তারিত বিবরণ আছে দ্য স্টেটসম্যান, ০৭\০৫\১৯৪৭, পৃষ্ঠা-১)।
পাঞ্জাব যদি ভাগ হয়, অনতিবিলম্বে বাংলাকেও ভাগ করতে হবে, একইসঙ্গে বাংলার মন্ত্রীসভাকেও বাতিল করতে হবে - এই দাবির পাশাপাশি এই বঙ্গের জন্যে পৃথক মন্ত্রীসভা তৈরির দাবি সংবলিত তারবার্তা সেক্রেটারি অব স্টেট ফর ইন্ডিয়া লর্ড লিস্টওয়েলের কাছে হিন্দু মহাসভার পক্ষে পাঠান শ্যামাপ্রসাদ (দ্য স্টেটসম্যান, ০৮\০৫\১৯৪৭, পৃষ্ঠা-৮)। এই পর্যায়ে হিন্দু বুদ্ধিজীবীদের সমবেত করেন শ্যামাপ্রসাদ। ২২ এপ্রিল বাংলাভাগের সমর্থনে দিল্লিতে শ্যামাপ্রসাদের সমর্থনে বক্তৃতা করেন ঐতিহাসিক সুরেন্দ্রনাথ সেন। ৭ মে ডঃ যদুনাথ সরকার (তাঁর সাথে স্যার আশুতোষের পরিবারের ব্যক্তিগত স্তরের সংঘাত ছিল। সেটা ভুলে তাঁর ক্যারিশমাকে ব্যবহার করতে স্যার যদুনাথের সঙ্গে আপস করেন শ্যামাপ্রসাদ), ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার, বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা, ডঃ সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়, ডঃ শিলির মিত্র বাংলাভাগের দাবি জানিয়ে লর্ড লিস্টওয়েলের কাছে তারবার্তা পাঠান। স্যার জন এন্ডারসন এবং স্যার স্টাফোর্ড ক্রিপসের কাছেও তাঁরা বাংলাভাগ চেয়ে তারবার্তা পাঠিয়েছিলেন (অমৃতবাজার পত্রিকা, ২৫\০৪\১৯৪৭, পৃষ্ঠা-৭। দ্য স্টেটসম্যান, ০৮\০৫\১৯৪৭, পৃষ্ঠা-৮। হিন্দুস্থান স্টান্ডার্ড, ০৮\০৫\১৯৪৭, পৃষ্ঠা-৩) এমনকি তথাকথিত সন্ন্যাস, বৈরাগ্য থেকে উত্থীত হয়ে বাংলাভাগের সমর্থনে লাহোরের ট্রিবিউন পত্রিকাতে (০৭\০৫\১৯৪৭, পৃষ্ঠা-৯) বিবৃতি দিলেন অরবিন্দ ঘোষ। এই ট্রিবিউন পত্রিকাটিতেই কিন্তু বিংশ শতকের গোড়াতে প্রথম দেশভাগের দাবি তুলেছিলেন লালা লাজপত রাই। (’৪৭-র গোটা মে মাস জুড়ে ট্রিবিউনের প্রায় প্রতিটি খবরে বাংলাভাগের দাবির সমর্থনে জোরাল অভিমত থাকত)।
দুর্ভাগ্যের বিষয় অন্নদাশঙ্কর রায় ব্যতীত কোনো বুদ্ধিজীবীই কার্যত সেদিন দেশভাগ, বাংলাভাগের বিরোধিতা করেন নি। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য সচিব হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত, বিশ্বনাগরিক কবি অমিয় চক্রবর্তী পর্যন্ত বাংলাভাগকে সমর্থন করেন। সোহরাওয়ার্দি - শরৎ বসুর অখণ্ড বাংলাকে তিনি ‘ধাপ্পা’ বলে অভিহিত করেছিলেন (অমৃতবাজার পত্রিকা, ০১\০৬\১৯৪৭, পৃষ্ঠা-৬)।
বাংলাভাগের সমর্থনে কংগ্রেস আর হিন্দু মহাসভার যৌথসভা ছিল তখনকার একটি নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের যাতে তপশিলি জাতি-উপজাতিদের উপর পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ না থাকে, সেইজন্যে হিন্দু মহাসভার উদ্যোগে তৈরি হয় বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল ডিপ্রেসড ক্লাসেস লিগ।এই সংগঠনের সম্পাদক হন হিন্দু মহাসভা ঘনিষ্ঠ আর দাস। তিনি বলেন, যোগেন মণ্ডল হলেন মুসলিম লিগের সমর্থক। তাই তাঁর দেশভাগ-বাংলাভাগের বিরোধিতার কোনো অধিকার নেই। আর দাস বাংলাভাগের সমর্থনে একদম হিন্দু মহাসভার সুরে কথা বলেন (দ্য স্টেটসম্যান, ০৯\০৫\১৯৪৭, পৃষ্ঠা-৪)।