E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৭ বর্ষ ৪৯ সংখ্যা / ৩১ জুলাই ২০২০ / ১৫ শ্রাবণ ১৪২৭

সোচ্চার চিন্তা

‘‘বিপদে মোরে রক্ষা করো, এ নহে মোর প্রার্থনা’’

পল্লব সেনগুপ্ত


মাননীয় শফিক-উর-রহমান সাহেবের নাম জানেন না-কি সবাই? আমার বিশ্বাস, না। এই ‘ধর্মপ্রাণ’ মানুষটি আমাদেরই প্রতিনিধি হয়ে উত্তর প্রদেশের সাম্‌ভল কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়ে সংসদে গেছেন। তাই আপনারা চিনুন, আর না-ই চিনুন - তিনি তাঁর পদাধিকার বলে ১৩৫ কোটি ভারতবাসীর অন্যতম অভিভাবক!! তো, হঠাৎ এই মান্যবর শফিক সাহেবের প্রসঙ্গ নিয়ে এ নিবন্ধ শুরু করছি কেন, শুধোচ্ছেন নিশ্চয়ই? বলছি।

শফিক সাহেব ক-দিন আগে একটি ভিডিয়ো-বক্তৃতায় নিদারুণ একখানা যা পয়গাম বর্ষণ করেছেন - তার উপলক্ষেই এই লেখা। উনি এই বিশ্বজোড়া কোভিড-১৯, ওরফে করোনা নামক মহামারী ঠিক কী কারণে মানবজাতিকে শাস্তি দিচ্ছে এভাবে, তার উৎস খুঁজে পেয়েছেন বলে ঘোষণা করেছেন!! তাঁর চিন্তালব্ধ সিদ্ধান্তটি হলো, এটা বীজাণু - তথা ভাইরাসজনিত কোনো ব্যাধি নয়; এ হচ্ছে মানুষের পুঞ্জিভূত পাপের শাস্তি, সর্বশক্তিমান পাক্‌ আল্লাহ রসুল ওই পাপরাশির শাস্তি দিতে এই করোনা-দানবকে বিশ্বে পাঠিয়েছেন! তাই মানুষের এখন একমাত্র কর্তব্য হচ্ছে আল্লাতালার ‘রহম’ ভিক্ষা করে অবিরাম ক্ষমা চেয়ে যাওয়া। আর, আইনের পরিভাষায় যাকে ‘প্রেয়ার ফর অ্যামেনেস্টি’ বলে, খোদাতালার কাছে সেটা চাইবার সুবিধার্থে সরকারের উচিত লকডাউন ইত্যাদি গুনাহ পরিত্যাগ করে আসন্ন বক্‌র-ইদ শুরু হবার আগেই সমস্ত মসজিদ ইদগাহ ইত্যাদি অবারিত রেখে দেবার ব্যবস্থা করা এবং কুরবানিতে পশু হালাল করে সর্বশক্তিমানের উদ্দেশে সেসব নিবেদন করার সুবিধার জন্য যাবতীয় দোকানপাট খুলতে অনুমতি দেওয়া!! সেই অনুমতি না পেলে সমস্ত পরহেজগার মানুষের উচিত জোর করে তাই করা!!!

বিশ্বজোড়া এই মারণব্যাধি - যা ইতিমধ্যে সাড়ে ছ’লক্ষ মানুষের প্রাণ নিয়েছে - তা কি অমুসলিমদেরও আক্রমণ করে নি? বিশ্বের সেসব দেশ এই কাল-মহামারীর প্রকোপে বিপর্যস্ত - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ব্রাজিল, রাশিয়া - সেখানে সব মিলিয়ে এত লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে করোনার কারণে - তারা তো কেউই মুসলিমপ্রধান দেশ নয়। হ্যাঁ, ভারতেও বিশাল সংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারাও গেছেন, তাঁরাও কি সকলেই মুসলিম? তাহলে? অন্য ধর্মবিশ্বাসীদের জন্য শফিক সাহেবের কী ফরমান? এবং এই অভাজনের মতো ধর্মবিশ্বাসহীন মানুষদের (দুনিয়ায় তাঁদের সংখ্যাও কম নয়!) জন্য কোন্‌ পয়গাম তিনি দিচ্ছেন? না-কি, অন্য ধর্মাবলম্বীদের এবং নাস্তিকদের বাঁচাই উচিত নয়!

ভাল কথা। তিনি নিজে পরহেজগার-ওরফে ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি। নিজের ধর্ম-বিশ্বাস অনুসারে কথা বলার অধিকার তাঁর আছে। কিন্তু যে কথা মানুষকে বিভ্রান্ত করে, বিপন্ন মানুষকে আরও বিপদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে উসকানি দেয় - সেই কথা বলাটা, সেটা জনসাধারণের উদ্দেশে ‘বাণী’ হিসেবে প্রচার করাটা আইনসিদ্ধ কি-না, সে প্রশ্ন তো ভাই তুলবোই! ...প্রথমত, উনি যা বলেছেন তার মর্ম তো এই যে, করোনা শুধু মুসলিম ধর্মাবলম্বীদেরই আক্রমণ করছে? তাই ওই প্রার্থনা-ট্রার্থনার মাধ্যমে এবং বকর্‌ ইদে পশু জবেহ্‌ করলে (শুধু?) তাঁরাই বিপদমু্ক্ত হবেন? বিশ্বজোড়া এই মারণব্যাধি - যা ইতিমধ্যে সাড়ে ছ’লক্ষ মানুষের প্রাণ নিয়েছে - তা কি অমুসলিমদেরও আক্রমণ করে নি? বিশ্বের সেসব দেশ এই কাল-মহামারীর প্রকোপে বিপর্যস্ত - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ব্রাজিল, রাশিয়া - সেখানে সব মিলিয়ে এত লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে করোনার কারণে - তারা তো কেউই মুসলিমপ্রধান দেশ নয়। হ্যাঁ, ভারতেও বিশাল সংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারাও গেছেন, তাঁরাও কি সকলেই মুসলিম? তাহলে? অন্য ধর্মবিশ্বাসীদের জন্য শফিক সাহেবের কী ফরমান? এবং এই অভাজনের মতো ধর্মবিশ্বাসহীন মানুষদের (দুনিয়ায় তাঁদের সংখ্যাও কম নয়!) জন্য কোন্‌ পয়গাম তিনি দিচ্ছেন? না-কি, অন্য ধর্মাবলম্বীদের এবং নাস্তিকদের বাঁচাই উচিত নয়!


।। দুই ।।

এই ধরনের ধর্মের নামে বিভ্রান্তি ছড়ানোর ব্যাপারটা এতদিন তো জানতুম বিজেপি’রই কপিরাইটভুক্ত। তা, সমাজবাদী দলের এই সাংসদটি তো সমাজতন্ত্রের আদর্শে বিশ্বাসী বলেই গণ্য হবেন - কী, তাই তো? না-কি, ইতিমধ্যে তিনি বিজেপি’র মাইনরিটি সেলে ঢুকে পড়েছেন? জায়গাটা ইউ পি, কাজেই সেটা খুব একটা অসম্ভাবনীয় ব্যাপার নয়। তবে, কোরবানির জিগির তুলে বিজেপি’র হাতে তামাক খাওয়াটাও বোধহয় সম্ভব নয়। ...তা, সে যা-ই হোক না কেন - ওই পরমেশ্বরের সমীপে প্রার্থনার বিধানটা নিয়েই একটু ভাবনাচিন্তা করা যাক বরংঃ

ক) ফরাসি বিপ্লবের পিছনে যে চিন্তানায়করা সক্রিয়ভাবে অনুপ্রেরণা (মার্জনা করবেন! পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিভাষায় ‘অনুপ্রেরণা’ নয়, একেবারে অভিধানগত অর্থেই লিখছি শব্দটা।) দেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন যুক্তিবাদী দার্শনিক ভলতেয়ার। তো, ওঁকে একবার কেউ না-কি শুধিয়েছিলেন যে, ইঁদুর, গোরু, ভেড়া, ছাগল ইত্যাদি যেসব প্রাণী খেতে ঢুকে ফসলের বারোটা বা‍‌জিয়ে দেয়, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে তাদের খতম করা যায় কি না? ভলতেয়ার গম্ভীরভাবে জবাব দেন: ‘‘অবশ্যই যায়। তবে তার সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণে সেঁকো বিষও থাকা দরকার।’’

খ) ইংরেজ নৌ-সেনাপতি অ্যাডমিরাল নেলসন সম্পর্কে কথিত আছে তাঁকে কেউ প্রশ্ন করেছিল যে - ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলে কি যুদ্ধে জেতা যায়? উত্তরে তিনিও বলেছিলেন: ‘‘অবশ্যই যায়; তবে যদি সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে বারুদ শুকনো অবস্থায় রেখে দেওয়া যায়।’’

গ) বিদেশ থেকে দেশের দিকে যদি নজর দেওয়া হয় এবারে, তাহলে অক্ষয়কুমার দত্তের সৃষ্ট একটি পরিহাস- বিজল্পিত অঙ্কের উল্লেখ করা মন্দ হবে না। উনি যে ইকোয়েশ্যনটি (বীজগণিতে যাকে সমীকরণ বলে) তৈরি করেছিলেন, তা হলো এই রকমঃ
(ঈশ্বর-বিশ্বাসীর ক্ষেত্রে) প্রার্থনা + পরিশ্রম = শস্য
(ঈশ্বর-অবিশ্বাসীর ক্ষেত্রে) পরিশ্রম = শস্য
\ প্রার্থনা = ০ (শূন্য)
- মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন, উল্লেখিত তিনটি ক্ষেত্রেই!


।। তিন ।।

দৈবী মহিমায়, তথা তুকতাক-ঝাড়ফুঁক-মাদুলি-তাবিজ-কবচ-জলপড়া-তেলপড়া-চরণামৃত-অমুক অমুক নদীর জল-পুজো আচ্চার প্রসাদী ফুল - মায় গুরু ঠাকুরের উচ্ছিষ্ট ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যাধি নিরাময়ের যে আদিম অন্ধতা, কুৎসিত কুসংস্কার এবং অসীম অশিক্ষা আছে - এই প্রার্থনা-ট্রার্থনা করে সুস্থ হবার যে মূঢ়তা আমাদের সামনে বারংবার হাজির হয় - সেটা মূলত আলাদা কিছু নয়। শুধু শফিক-উর-রহমানের প্রসঙ্গেই এটা বলছি এমনটা না কিন্তু। মূর্খতার (এবং শয়তানির) কোনো ধর্ম, বা দেশ-কাল-জাতি হয় না। শফিক সাহেব তাঁর চিন্তায় সমাজতন্ত্র এবং নমাজতন্ত্রকে একাকার করে ফেলছেন বলে তাঁর ধর্মবিশ্বাসের প্রতি কটাক্ষ করছি এমন ভাববেন না। তাঁর ওই পয়গামের আগে-পরে আরও যা যা হাস্যকর এবং লজ্জাজনক মূঢ় প্রচার দেখা গেছে এবং যাচ্ছে, সেখানে সেইসবের উদ্‌গাতা যাঁরা, তেনারা তো সকলেই (বঙ্কিমচন্দ্রের বিদ্রূপের ভাষায়) ‘‘হাম বঢ়া হিন্‌ডু’’ বলে নিজেদের সম্বন্ধে কব্‌লান! শাঁখ বাজিয়ে, হাততালি দিয়ে, নাম-সংকীর্তন করে, গো-চোনা খাবার বিধান দিয়ে, হনুমান চালিশা ১০০০ বার পড়ে, সদ্য সদ্য একটি বিশেষ কোম্পানির পাঁপড়ের প্রচার করে - যাঁরা করোনা বিদূরণের প্রেসক্রিপশ্যন বিলোচ্ছেন তাঁরা তো হিন্দুত্বের ‘পোড়াকাষ্ঠ’ (শ্রীমান ঘণ্টুরাম-কৃত ‘পরাকাষ্ঠা’ শব্দটার তির্যক্‌ রূপায়ণ!) দেখানোর জন্যে যে গুন্ডাবাহিনী দেশময় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তার সক্রিয় সদস্যই শুধু নন - বড়ো বড়ো পদেরও অধিকারী, দলে এবং রাষ্ট্রশাসনে! এমনকি বিশ্বজোড়া প্রাজ্ঞ বিজ্ঞানীরা গবেষকেরা করোনার প্রতিষেধক বার করতে যখন দিবা-রাত্রি ধরে হিমসিম খাচ্ছেন, তখন রাতারাতি এক ধাপ্পাবাজ ব্যবসায়ী গেরুয়া চাপিয়ে শ্রীঅঙ্গে লাখ-লাখ টাকার বিজ্ঞাপন ছড়ালেন দেশজুড়ে এই মর্মে যে, তাঁর (ধর্মীয়) কোম্পানির মন্ত্রপূত ‘করোনিল’ খেলেই - কোভিড-১৯ একেবারে মঙ্গলগ্রহে কিংবা নেপচুন গ্রহের উদ্দেশে ধাঁ হয়ে যাবে! যাইহোক, কোর্টের রামকোঁৎকা খেয়ে সেই রামদেও বাবাজি এখন করোনার মহৌষধির গুণবত্তার কথা আর প্রচার করছেন না, নেহাতই একটা ওষুধ যা না-কি ‘ইমিউনিটি’ বাড়ায় (!) - অন্য নামে বেচছেন!

তবু না হয় ওই গেরুয়া-পরা ব্যবসায়ীটিকে কোর্ট-ভার্ডিক্টের পর উপেক্ষা করতে পারি। কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন মেঘাওয়ালে যখন সেই ‘ভাবিজি পাপ্‌পড’-এর প্যাকেটের ওপর নিজের শ্রীবদনের ছবি এবং সরকারি পদের উল্লেখসহ তার বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে কাজ করেন করোনা-প্রতিষেধক করার প্রতিশ্রুতিসহ, তখন কী বলবেন? ওটা কি ‘বিজনেস-অব-প্রফিট’ (বা লাভের গুড় খাওয়া) বলে গণ্য হবে না? সেক্ষেত্রে তাঁর মন্ত্রিত্বের চাকরিটাও খতম হওয়া উচিত নয় কি? আইন তো তাই বলে।

তবে, শফিক-উর-রহমান যদি ধার্মিকতায় তিমি-তুল্য হন, তাহলে তিমিঙ্গিল-তুল্য হচ্ছেন মধ্যপ্রদেশ বিধানসভার প্রোটেম-স্পিকার রামেশ্বর শর্মা! তো, এই রামশর্মাজির ধর্মের হেঁচকি তোলা কতখানি হাস্যকর - সেটা দেখি এবার। শফিক সাহেব তো শুধু মসজিদ-ঈদগা খুলে দিতে বলেছেন; আর রামবাবু তো উগ্‌রেছেন এই অনবদ্য বচননিচয়ঃ ‘‘ত্রেতাযুগে ভগবান শ্রীশ্রী রামচন্দ্রজি ধরাধামে আবির্ভূত হয়েছিলেন দানব রাবণের বিনাশ করে মানবজাতিকে রক্ষা করতে। আর একালে এই রামজনমভূমিতে (রূপোর ইটে ভিত গেঁথে !?!) মন্দির তৈরি করার পরে তিনি আবার আবির্ভূত হয়ে কোভিড দানবের বিনাশ করবেন।’’...কী, বলবেন কিছু? ওদিকে রামের জন্মভূমি নিয়ে তো নেপালের প্রধানমন্ত্রীও আবার টান মেরেছেন!!


।। চার ।।

কারুর অভিশাপে - তা সে মানুষই হোক, আর ভগবান-টগবানই হোক - রোগ-ব্যাধির আক্রমণ ঘটার কল্পনাটা অতীব পুরানো! এখন যেমন কুঁদুলে-মহিলারা শাপটাপ দেন : ‘‘ওলাউঠো হোক তোর, তুই মরণরোগে নিব্বংশ হয়ে যা’’ - ইত্যাদি বলে-টলে, ঠিক তেমনই দেখি খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতকে, অথর্ববেদের একটি শ্লোকে (৫/২২/৭) যেখানেতে মুজবৎ পাহাড়ের ওপারে এসে বসবাসকারী নবাগত ব্যাকট্রিয়ান গ্রিকদের মধ্যে ‘তক্‌মন’ নামে একটি ব্যাধিকে মহামারীরূপে আক্রমণ করার জন্যে উসকানি দেওয়া হচ্ছে। ঈশ্বরের অভিশাপের গল্প আছে, বাইবেলের ওলড টেস্টামেন্টের ‘বুক অব এক্সোডাসে’ : শরণার্থী ইহুদিরা দেশে ফিরতে চাইলে মিশররাজ ফারাও তাতে বাধা দিলেন; ইহুদিদের পরমেশ্বর জিহোভা ক্রুদ্ধ হয়ে তখন মিশরে বিভিন্ন ধরনের প্লেগ ছড়িয়ে পড়ার অভিশাপ দিচ্ছেন। সেও খ্রিস্টপূর্ব ১৬৫ সাল নাগাদ লেখা। খ্রিস্টীয় ১৪শ শতকে ইতালীয় লেখক বোকাচ্চিওর ‘ডেকামেরন’ বইতেও আছে যে, প্লেগ মহামারী হিসেবে দেশে দেখা দিয়েছে ঈশ্বরের অভিশাপে এবং ধর্মব্যবসায়ী যাজকেরা নিদান দিচ্ছে প্রার্থনা করে তাঁর মার্জনা ভিক্ষার জন্যে! এই চতুর্দশ শতকেই ইংরেজ কবি চসারের ‘ক্যান্টারবারি টেলজ’-এও একই ধরনের গল্প আছে - পাপের কারণে প্লেগ দেখা দিয়েছে, ইত্যাদি ইত্যাদি!

তাহলে তো দেখা যাচ্ছে যে, খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতক থেকে সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত মহাব্যাধি এবং পাপ, অভিশাপ, ভগবানের ইচ্ছা - ইত্যাদি নিয়ে ভাবনার কোনোই বদল ঘটেনি? অথর্ব বেদের ‘ক্ষিপ্ত’ মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি কিংবা প্রাচীন ইহুদি সমাজের কল্প-পরমেশ্বর জিহোভা, মধ্যযুগের ক্যাথলিক ইতালির ধর্মবণিক এবং প্রোটেস্টান্ট ইংল্যান্ডের সাধারণ মানুষ আর বর্তমানে দজ্জাল ক্ষেন্তি পিসি,‍‌ বিন্তি মাসি এবং ধর্মপ্রাণ পরহেজগার এমপি আর মহামান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বা প্রাদেশিক বিধানসভার প্রোটেম স্পিকার - কারুরই মানসিকতা আলাদা নয়! অন্ধবিশ্বাসের দাস সবাই। তবু, রবি ঠাকুরের সেই কথাটিই যে সকলকে সোচ্চারে বলতে বলবঃ ‘‘বিপদে মোরে রক্ষা করো, এ নহে মোর প্রার্থনা!’’