৬০ বর্ষ ৩৩ সংখ্যা / ৩১ মার্চ, ২০২৩ / ১৬ চৈত্র, ১৪২৯
কলকাতায় বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের যৌথ মিছিলের ডাক
বিজেপি হটাও দেশ বাঁচাও - তৃণমূল হটাও রাজ্য বাঁচাও
তৃণমূলের দুর্নীতির প্রতিবাদে কলকাতায় বামফ্রন্ট-কংগ্রেসের যৌথ মিছিল।
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ কেন্দ্রের বঞ্চনার প্রতিবাদে এবং রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রসের সীমাহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ২৯ মার্চ উত্তাল হলো কলকাতার রাজপথ। এদিন মধ্য কলকাতার রামলীলা ময়দান থেকে আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু রোড ধরে পার্ক স্ট্রিট হয়ে এক সুবিশাল মিছিল গিয়ে শেষ হয় পার্ক সার্কাস ময়দানের কাছে লেডি ব্র্যাবোর্ন কলেজের সামনে । ২৪ মার্চ রাজ্য বামফ্রন্টের বৈঠক শেষে রাজ্যজুড়ে ২৮,২৯ এবং ৩০ মার্চ প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছিল।এই কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে ২৯ মার্চ কলকাতায় কেন্দ্রীয় মিছিলের আহ্বান জানিয়েছিল বামফ্রন্ট। পরে বামফ্রন্টের আবেদনে সাড়া দিয়ে এই একই দাবিতে কংগ্রেস দলও মিছিলে শামিল হয়। এদিনের এই যৌথ মিছিল থেকে আওয়াজ ওঠে দেশ বাঁচাতে কেন্দ্র থেকে মোদিকে হঠাতে হবে এবং রাজ্যকে দুর্নীতি মুক্ত করে উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে নিয়ে যেতে রাজ্য থেকে দূর করতে হবে তৃণমূল সরকারকে।
এদিন মানুষের হকের দাবিতে কলকাতার জনপথ যে উত্তাল হবে তা আঁচ করে তৃণমূল এবং বিজেপি দুই দলই মানুষকে বিভ্রান্ত করতে কর্মসূচি নেয়। তৃণমূলের নেতা অভিষেক ব্যানার্জিও এদিনই শহিদ মিনারে সভার দিন বেছে নেয়। কিন্তু সাধারণ মানুষ যে এদের এই কপট রাজনীতিতে আর প্রভাবিত হবেন না, তা এদিনের যৌথ মিছিলে মানুষের ঢ্ল স্পষ্ট করে দিয়েছে।
এখন রাজ্যজুড়ে লালঝান্ডার মিছিল-সমাবেশে ক্রমশ যে রাজ্যের রাজনীতির পরিবেশ পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটছে তার আভাস মিলছে নানাভাবে। সমবায় থেকে বিধানসভা উপনির্বাচন - সর্বত্র জয়ী হচ্ছেন বামপন্থীরা। তৃণমূল যেমন পরাজিত হচ্ছে, তেমনি সাম্প্রদায়িক বিজেপি ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। এছাড়া তৃণমূলের আকাশছোঁয়া দুর্নীতিতে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। শিক্ষায় ব্যাপক দুর্নীতি নিয়ে যখন রাজ্য তোলপাড় হচ্ছে,ঠিক তখনই রাজ্যের পৌরসভাগুলিতেও সীমাহীন দুর্নীতির কারবার ফাঁস হওয়ায় মানুষ প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। এসব ছাড়াও আগের চিটফান্ড কেলেঙ্কারির পাশাপাশি গোরু, কয়লা, পাথর খাদান, আবাস দুর্নীতি ইত্যাদি নানা কেলেঙ্কারিতে ডুবে আছে গোটা তৃণমূল দল। এসবের দায়ে দলের অনেক নেতা-মন্ত্রী, আমলা, পর্ষদ কর্তাকে এখন হাজতবাস করতে হচ্ছে। এই সমস্ত অভিযোগে জড়িয়েছে শাসক দল তৃণমূলের একেবারে শীর্ষ স্তর থেকে নিচু তলার মাতব্বররা। তারা এখন রয়েছে ইডি-সিবিআই প্রভৃতি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার নজরদারিতে। অনেকেই কারান্তরালে যাবার জন্য দিন গুনছে। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে এবং রাজ্যবাসীর ক্ষোভকে ঘুরিয়ে দিতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পাত্র-মিত্র-অমাত্যদের নিয়ে রেড রোডে দু'দিনের ধরনার নাটক শুরু করেন। একইসঙ্গে তিনি ও তাঁর দলের অনুচররা নিজেদের দুর্নীতির ঢাকতে সিপিআই(এম)'র দুর্নীতি খোঁজার প্রহসন করে নিজেদেরই হাসির খোরাক করে তুলছেন।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, তৃণমূল জমানায় পঞ্চায়েত, পৌরসভা সর্বত্র উন্নয়ন স্তব্ধ। রাজ্যের সর্বত্র চলছে প্রমোটার আর কাটমানিরাজ। আর সরকারি তহবিল ভেঙে চলছে মেলা, খেলা, দেদার উৎসব। প্রশাসনিক বৈঠকের নামে মোচ্ছব চলছে। এদিকে একশো দিনের কাজ নেই, মজুরি নেই, বেকার যুবকেরা কাজের সন্ধানে পাড়ি দিচ্ছে ভিন রাজ্যে। কথায় কথায় কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে রাজ্য সরকারের একপ্রকার দেউলিয়া অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার অভিযোগে ধরনার নাটক করে সহানুভূতি কুড়োনোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু মানুষ এতে বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখায়নি। উলটে ক্ষুব্ধ মানুষ এদিন বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের মিছিলে যোগ দিয়ে শাসক দলের সভা ফেরত বাসবোঝাই তৃণমূলীদের ‘চোর চোর’ ধ্বনি দিয়ে কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, তৃণমূলীরা তার প্রতিবাদের সাহস দেখাতে পারেনি।
এদিন পশ্চিমবঙ্গের গরিব মানুষদের প্রকল্প, বিশেষ করে একশো দিনের কাজের বরাদ্দ কমানো ও রাজ্যের শাসক দলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং বিজেপি' র সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে রুখতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ।
এদিনের মিছিল শেষে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন,তৃণমূল এবং বিজেপি'র বিরুদ্ধে যে যেখানে লড়াই করতে চান, তাঁদের সবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা লড়াইয়ে প্রস্তুত।
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন,বাংলায় চোরেদের বিরুদ্ধে মানুষ যখন জাগছে,তখন চোরেরা বাঁচার জন্য জোট বাঁধছে।তৃণমূল এবং বিজেপি, দিল্লিতে মোদি এবং রাজ্যে মমতা ব্যনার্জি জোট বেঁধে তামাশা দেখাচ্ছে রাজ্যের মানুষকে। এর বিরুদ্ধেই মানুষ হক বুঝে নেবার লড়াইতে এককাট্টা হচ্ছেন।
এদিনের মিছিলে অংশ নেন বিমান বসু, মহম্মদ সেলিম ছাড়াও সিপিআই(এম) নেতা সূর্য মিশ্র, রবীন দেব,শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, আরএসপি নেতা মনোজ ভট্টাচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা নরেন চ্যাটার্জি, সিপিআই নেতা স্বপন ব্যনার্জি, কংগ্রেস নেতা অসিত মিত্র, কৌস্তভ বাগচি, তাপস মজুমদার প্রমুখ।
মিছিল শেষে সভায় অন্যন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নরেন চ্যাটার্জি, সুভাষ নস্কর, অসিত মিত্র ও আশুতোষ চ্যাটার্জি প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন স্বপন ব্যানার্জি।