E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৩৩ সংখ্যা / ৩১ মার্চ, ২০২৩ / ১৬ চৈত্র, ১৪২৯

স্বনির্ভর গোষ্ঠী আন্দোলন

বামফ্রন্ট সরকারের অনন্য সাফল্য

সুপ্রতীপ রায়


বামফ্রন্ট সরকারের সময়েই মহিলাদের ক্ষমতায়ন ও স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ার ক্ষেত্রে সাফল্যের নজির তৈরি হয়েছিল রাজ্যে। এ রাজ্যে দীর্ঘ গণআন্দোলন ও শ্রেণি-আন্দোলনের ফলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল নারীর অধিকার ও মর্যাদা। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ভূমি সংস্কার ও ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়ন সম্ভব হয়েছিল। প্রশাসনে বিশেষ করে পঞ্চায়েত ও পৌর সভায় মহিলারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই রাজ্যজুড়ে সাক্ষরতা, স্ব-নির্ভরতার আন্দোলন যে বিরাট সাফল্য অর্জন করেছিল, তা অনেকটাই সম্ভব হয়েছিল গ্রাম-গ্রামান্তরের বিপুল অংশের মহিলাদের অংশগ্রহণে।

● স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির কাজ একাধিক দপ্তরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল। তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য সপ্তম বামফ্রন্ট সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ‘‘এসএইচজিঅ্যান্ডএসই’’ নামে একটি পৃথক দপ্তর গঠন করে।

● স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সদস্যরা প্রথম পর্যায়ে কৃষি পণ্যের ব্যবসা, প্রাণী পালন, শোলা, বাঁশ, বেত, শঙ্খ প্রভৃতি দ্রব্যের হস্তশিল্প, বিভিন্ন রকমের আচার, জ্যাম, জেলি, ডালের বড়ি এবং চাল থেকে মুড়ি তৈরির কাজে যুক্ত হয়েছিল। পরবর্তীকালে স্থানীয় স্তরে অর্থনীতির চাহিদা অনুযায়ী নতুন নতুন সম্ভাবনার উদ্ভব হয়। এ কাজে গোষ্ঠীগুলিকে সহায়তা দেবার জন্য রাজ্য সরকারের এস.এইচ.জি.অ্যান্ডএস.ই. দপ্তরের অধীনে একটি নতুন বিপণন নিগম গড়ে তোলে।

● ২০০৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল ৩ লক্ষ ৮০ হাজার। ২০১০ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ লক্ষেরও বেশি।

● এই সময়কালে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিতে মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২০ লক্ষ। সদস্যদের ৯০ শতাংশই ছিল মহিলা।

● এই সময়ে গোষ্ঠীগুলির সঞ্চিত অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় ২হাজার কোটি টাকা। প্রাপ্ত ঋণের পরিমাণ প্রায় ৮,৫০০ কোটি টাকা।

● সেই সময়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিলে ব্যাঙ্ক ঋণে সুদ দিতে হতো মাত্র ৪ শতাংশ হাড়ে। বাকি ৭ শতাংশ সুদের টাকা দিত রাজ্য সরকার।

● তখন রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকারের দাবির ভিত্তিতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ধান চাল সংগ্রহের এজেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার।

● ধানের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের ২.৫ শতাংশ কমিশন হিসেবে এবং কুইন্টাল প্রতি ৫২.৯২ টাকা গোষ্ঠীগুলি পেত রাজ্য সরকারের কাছ থেকে।

● এই গোষ্ঠীগুলি নিজের আয়ের সংস্থান করা,কর্মসংস্থান করা ছাড়াও সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। নিজেদের সাক্ষর করা, শিক্ষার মান বাড়ানোর পাশাপাশি এলাকায় সর্বশিক্ষা, সর্বস্বাস্থ্য, সাক্ষরতা, মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পালস পোলিও ইত্যাদি নানা কর্মসূচিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অংশ নিয়েছে।

● এই গোষ্ঠীগুলি নিজেদের পরিবার ও প্রতিবেশির স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হবার পাশাপাশি তারা পরিবেশ সম্পর্কেও সচেতন হয়ে উঠেছিলেন। অঞ্চলের পরিবেশকে নির্মল করার লক্ষ্য নিয়ে এরা নিজেরাই পঞ্চায়েতের সাহায্যে বাড়িতে বাড়িতে শৌচালয় তৈরি করেছেন। বাড়ির আশেপাশের খাল, নর্দমা পরিষ্কার করতে উদ্যোগী হয়েছেন। এছাড়া পুকুর, নলকূপ, রাস্তাঘাট ইত্যাদি সংস্কারে উদ্যোগী ভূমিকা নিয়েছেন।

● তখন অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, যে সমস্ত অঞ্চলে এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর আন্দোলন গড়ে ওঠে, সে সব জায়গায় গ্রাম সংসদ এবং গ্রামোন্নয়ন সমিতিগুলি অনেক বেশি শক্তিশালী এবং উপযুক্ত ভূমিকা পালনে সক্ষম হয়।

● বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ার আন্দোলন বা অভিযানে যে দিকগুলির উন্নয়ন উল্লেখযোগ্যভাবে লক্ষ করা গেছে তা হলো, গ্রামের দরিদ্র,অবহেলিত, পিছিয়ে পড়া মহিলাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়। সেই সঙ্গে বধূ নির্যাতন, পণপ্রথা প্রভৃতি সামাজিক অত্যাচারের প্রতিরোধ এবং বিরোধিতা বেশ জোরালোভাবেই লক্ষ করা যায়।

● এই গোষ্ঠীগুলির মধ্যদিয়ে সামাজিক ন্যায় বিচার ও মহিলাদের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি হয়। জীবনমানের গুণগত পরিবর্তন ঘটে এবং নানা ধরনের সামাজিক শোষণ থেকে বাঁচার প্রক্রিয়া তরান্বিত হয়। এই নতুন ভাবনা, নতুন আন্দোলন গ্রামের গরিব মানুষ বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া মহিলাদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়।

আজকের তৃণমূলের জমানায় এই অনন্য নজির ধ্বংসের পথে।