৬০ বর্ষ ৩৩ সংখ্যা / ৩১ মার্চ, ২০২৩ / ১৬ চৈত্র, ১৪২৯
পঞ্চায়েতঃ পথ হারানো পথিক নই মোরা
মানব মাইতি
পঞ্চায়েত সংবিধান স্বীকৃত Local Self-government বা স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার। কেন্দ্র, রাজ্য’র পর তৃতীয় সরকার। তবে এর ক্ষমতা খুবই সীমিত। মৌলিক সমস্যা সমাধানের চাবিকাঠি নেই। ঢাল-তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দার। তবে গ্রামীণ জনগণের বিপদে-আপদে বন্ধুর মতো, পড়শি-প্রতিবেশীর অন্তর নিয়ে ‘অন্ধের ষষ্টি’ হয়ে থাকার সুযোগ আছে পঞ্চায়েতের। তাই প্রশ্ন, পঞ্চায়েত তুমি কার? শাসক শোষকের? না, শোষিত বঞ্চিত মেহনতির?
পঞ্চায়েতঃ স্বদেশি সরকার
১৭৬০ থেকে ১৮৫৭, সন্ন্যাসী বা ফকির বিদ্রোহ থেকে হুল বিদ্রোহ হয়ে দেশের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ যা সিপাহী বিদ্রোহ নামে পরিচিত; বিদ্রোহের ঢেউ এবং সাধারণের অংশগ্রহণ ব্রিটিশ শাসনের ভিতকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। তাই ব্রিটিশ শাসকেরা নিজেদের বশংবদ তৈরির উদ্দেশ্য নিয়ে ১৮৭৪ সালে চালু করে এই ‘স্থানীয় স্বশাসন’ ব্যবস্থা। এই সমস্ত ‘লোকাল বোর্ডে’ মোট সদস্যের ১২.৫ শতাংশ ছিল সরকারি আধিকারিক, ৪৭.৭ শতাংশ জমিদার, ২৩.৮ শতাংশ আইনজীবী। লোকাল বোর্ডের নিজস্ব বাজেট ছিল না, প্রাদেশিক সরকারের অংশ ছিল তাদের বাজেট। নিয়মিত সভাও বসত না। তাই রবীন্দ্রনাথ এই পঞ্চায়েতগুলিকে ব্রিটিশের গুপ্তচর পোষার পঞ্চায়েত বলেছিলেন।
ঐতিহাসিক সত্য, আধুনিক ভারতে পঞ্চায়েতের পথিকৃৎ রবীন্দ্রনাথ। এ সম্পর্কে বিশিষ্ট গবেষক সুধী প্রধান বলেছেন, ‘‘...যখন কৃষকসভা বা ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনের প্রাথমিক চেষ্টাও শুরু হয়নি - তখন রবীন্দ্রনাথ কর্তৃক স্বদেশি সমাজ গঠন এবং পাবনা রাষ্ট্রনৈতিক সম্মেলনে বাংলার কিছু গ্রাম বেছে নিয়ে কাজ শুরু করার আহ্বানকে বৈপ্লবিক আহ্বান বলা চলে। রবীন্দ্রনাথ কোনো রাজনৈতিক দলে ছিলেন না। অথচ তার পরিকল্পনা চরমরূপে ধারণ করার সুযোগ পেলে ব্রিটিশ শাসনের সম্মুখীন হতো আর একটি সরকার, যার সৈন্যবাহিনী না থাকলেও তাকে প্যারালাল স্বদেশী সরকার বলা যেত।’’
রবীন্দ্রনাথের পল্লী সমাজে ১৫ দফা কর্মসূচিতে কৃষি থেকে গ্রামীণ শিল্প; শিক্ষা-স্বাস্থ্য-পানীয় জল; নারী শিক্ষা থেকে লোক-সংস্কৃতি; রাস্তাঘাট নির্মাণ থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আর তথ্য সংগ্রহের বিষয়গুলি গুরুত্ব সহকারে স্থান পেয়েছে।
এ বিষয়ে মহাত্মা গান্ধীর কথা অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়। পঞ্চায়তের মাধ্যমে, ‘‘গান্ধী গ্রামকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। জীবনধারণের সবরকম ন্যূনতম চাহিদা উৎপাদনে সক্ষম স্বনির্ভর, স্বাধীন স্বয়ংশাসিত গ্রাম সমাজব্যবস্থা (republic) চেয়েছিলেন গ্রাম-স্বরাজের প্রতিষ্ঠা। প্রতিটি গ্রাম একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ, আত্মনির্ভর অংশ অথচ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত স্বরাজ।’’
পঞ্চায়েতঃ বামফ্রন্টের লক্ষ্য
১৯৭৮ সালে বামফ্রন্ট সরকারের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই পঞ্চায়েতগুলির নির্বাচিত সদস্যের শতকরা ৮০জনের বেশি ছিলেন ভূমিহীন খেতমজুর, বর্গাদার, গ্রামীণ কারিগর, বেকার, শিক্ষক ও নিজের জমি চাষ করেন। অর্থাৎ সদস্যদের বিপুল সংখ্যক ছিলেন গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি। নির্ধারিত নীতি অনুসারে ধাপে ধাপে গ্রামীণ উন্নয়নের বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রচনা ও রূপায়ণের দায়িত্ব পঞ্চায়েতগুলির উপর দেওয়া হয়েছিল। একইসঙ্গে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত সদস্যরা এবং বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিও গড়ে উঠেছিল। এই লক্ষ্যে পঞ্চায়েত স্তরে বহুবিধ কর্মচারীপদ সৃষ্টি, কর্মচারীদের বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সমান বেতনক্রম, সকল ভাতা এবং অবসরকালীন পেনশন সহ মুখ্য সুবিধাগুলি প্রথম চালু করা হয়। কর্মচারীরা গোলাম নয়, দেশের সেবক - এই বোধ স্থান পেয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে তৎকালীন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান প্রমোদ দাশগুপ্ত বলেছিলেন, ‘‘...কেবল আশু কাজ নয়, পঞ্চায়েত সংস্থাগুলির হাতে দীর্ঘমেয়াদি কাজের কর্মসূচিও থাকবে। এই সমস্ত কাজের অন্যতম হবে ভূমিবণ্টন। রাজ্য সরকার বর্গারেকর্ড এবং ভূমিবণ্টনের কাজ ত্বরান্বিত করার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। এই কাজে পঞ্চায়েত সংস্থাগুলি সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।... সমাজ জীবনে সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখতে এই সংস্থাকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।’’ এখানে তিনি আরও উল্লেখ করেছিলেন, ‘‘বর্তমান পঞ্চায়েত সংস্থাগুলির কাজের মূল ভিত্তি হবে সক্রিয় গণউদ্যোগ সৃষ্টি।’’ তিনি সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘‘একথা এক মুহূর্তের জন্যও ভুললে চলবে না যে, নির্বাচনে গ্রামের কায়েমি স্বার্থবাদীরা পরাজিত হয়েছে কিন্তু তারা শেষ হয়ে যায়নি। তারা নানাভাবে চেষ্টা করবে পঞ্চায়েতের কাজকর্মে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে। তাই এদের এই অপপ্রয়াস সম্পর্কে সদা সতর্ক থাকতে হবে। ব্যাপক গণসমাবেশ এবং গণউদ্যোগের সাহায্যেই পঞ্চায়েতের কাজকর্ম ত্বরান্বিত করতে হবে।’’
এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্র গবেষক ক্ষুদিরাম দাস-এর কথা, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গ্রামোন্নয়ন ও গ্রাম প্রশাসনের সাম্প্রতিক ত্রিস্তর পঞ্চায়েতি ব্যবস্থায় জনকল্যাণের যেসব বহুমুখী উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে তা আমাদের অনিবার্যভাবে রবীন্দ্রনাথ-প্রবর্তিত গ্রামোন্নয়ন কর্মপ্রণালীর স্মৃতিতে নিয়ে যায়।’’
পঞ্চায়েতঃ বামফ্রন্টের সাফল্য
১৯৭৭ থেকে ২০০৬, বামফ্রন্ট সরকারের ৩০ বছরে ভূমিসংস্কারের সাফল্য সারা দেশে এরূপ উপকৃত পরিবারের ৫৩.২ শতাংশের বাস পশ্চিমবঙ্গে। খাস জমি পেয়েছেন এরূপ পরিবারের ৫৬ শতাংশই তপশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত। সারা দেশে এই সময়ে এইভাবে পুনর্বণ্টিত জমির ২২ ভাগ রয়েছে একা পশ্চিমবঙ্গে। যদিও গোটা দেশের মোট কৃষি জমির শতকরা মাত্র তিন ভাগ রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। এই কর্মসূচি রূপায়ণের মধ্য দিয়ে গ্রামাঞ্চলে ভূমিক্ষেত্রে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার উপর জোরালো আঘাত হেনে কায়েমি স্বার্থবাদীদের শক্তিকে দুর্বল করা সম্ভব হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুই বিঘা জমি’র ‘উপেন’ আর শরৎচন্দ্রের ‘মহেশ’ গল্পে ‘গফুর’ আর ‘কন্যা আমিনা’-র জন্মভিটা ছাড়ার করুণ দৃশ্যপট বন্ধ করা সম্ভব হয়েছিল। এরাজ্যে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারীর সংখ্যা ১৯৭৭ সালে যেখানে ছিল জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ, তা ২০০৬ সালে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল।
বামফ্রন্ট সরকারের সময়েই রাজ্যে প্রথম উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, তপশিলি জাতি ও উপজাতি ছাত্রীদের বিনামূল্যে পোশাক বিতরণ, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সকল ছাত্র-ছাত্রীকে দুপুরের খাদ্য প্রদান প্রভৃতি কর্মসূচির সাথে নতুন নতুন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক শিক্ষিকা ও অধ্যাপক অধ্যাপিকা নিয়োগ রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন দিকের সূচনা করেছিল। একইসাথে মাদ্রাসা শিক্ষায় বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তির বিষয়কে সম্পৃক্ত করে, মাদ্রাসা শিক্ষার কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা, মাদ্রাসাগুলিতে ১২ শতাংশ অমুসলিম ছাত্র-ছাত্রীর প্রবেশ, মাদ্রাসা স্কুল সার্ভিস কমিশন গঠন ও শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষক শিক্ষিকার মধ্যে অমুসলিমদের প্রবেশ বিশ্বে নজির সৃষ্টি করেছিল।
কিন্তু আজ আবার রাজ্যে শাসকদলের প্রত্যক্ষ অনুপ্রেরণায় শিক্ষাক্ষেত্রে চরম নৈরাজ্য নেমে এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষা সর্বত্র দুর্নীতির অভিযোগ স্পষ্ট। মন্ত্রী থেকে আমলা, শাসকদলের নেতা সবাই জেলে।
বামফ্রন্টের কর্মসূচির সাফল্য, সমাজের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করেছিল। জাতীয় নমুনা সমীক্ষা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলের মানুষ ওই সময়ে ফি বছর ১৯,৫৪০ কোটি টাকার শিল্পপণ্য কেনেন। রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বাজার প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছিল ৮ শতাংশ হারে। তাই শিল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেশে আমাদের রাজ্যের স্থান ছিল দ্বিতীয়। কৃষি উৎপাদনে দেশের মধ্যে আমরা ছিলাম সবার আগে।
পঞ্চায়েতঃ অনুপ্রেরণায় শাসক
কিন্তু রাজ্যের বর্তমান শাসকদলের তথাকথিত অনুপ্রেরণায়(!) সবক্ষেত্রে আমরা পিছনের দিকে দ্রুত এগিয়ে চলেছি। অর্থনীতিবিদ রতন খাসনবিশ উল্লেখ করেছেন, ‘‘রাজ্যে যে যথেষ্ট কাজ নেই - কাজের অভাবে বেশি বেশি সংখ্যক শ্রমজীবী রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এই বিষয়টি প্রথমে নজরে আনেন এ রাজ্যের মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি। ১৯৯৩-৯৪ সাল থেকেই তারা বলতে শুরু করেন যে, রাজ্যটির কৃষি আর নতুন জীবিকা সৃষ্টি করতে পারছে না, গ্রামাঞ্চলে বেকারির চাপ বাড়ছে। এই চাপকমানোর জন্য প্রয়োজন শিল্পের বিকাশ। সমস্যাটিকে এভাবে বোঝার চেষ্টা কখনও করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে শিল্পায়নের পথে তাঁর একমাত্র অবদান হলো বাধা সৃষ্টি করা।’’
রাজ্যে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। কেন্দ্রীয় সরকার বাজেটে এ বছর, গত বছরের তুলনায় ৩৩ শতাংশ কমিয়ে, ৮৯ হাজার কোটি টাকা থেকে ৬০ হাজার কোটিতে এবং খাদ্য সংগ্রহের খরচ ৭২,২৮২ কোটি থেকে ৫৯,৭৯৩ কোটি টাকাতে নামিয়ে দিয়েছে, মিড-ডে মিলের প্রকৃত বরাদ্দ ৯.৪ শতাংশ কমানো হয়েছে। সারে ভরতুকি কমানো হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা, পেট্রোলিয়ামে ৬,৯০০ কোটি টাকা। গত বছরের বরাদ্দকৃত অর্থ স্বাস্থ্যে ৯২৫৫ কোটি টাকা এবং শিক্ষাতে ৪,২৯৭ কোটি টাকা খরচ করা হয়নি। অর্থের অভাবে জনস্বার্থবাহী সামাজিক প্রকল্পগুলি ছাঁটাই করা হচ্ছে। আর আদানি আম্বানিদের কর থেকে ব্যাঙ্ক ঋণ ছাড় দেওয়া হচ্ছে, রাষ্ট্রায়ত্ত লাভজনক সংস্থাকে জলের দরে বিক্রির নামে পুঁজিপতিদের তা উপঢৌকন দেওয়া হচ্ছে, নির্বাচনী বন্ডের নামে ঘুরপথে নেওয়ার অভিযোগও শোনা যাচ্ছে - দুই শাসকদলের বিরুদ্ধে।
রাজ্যে বীজ, সার, কীটনাশক ওষুধ, বিদ্যুৎ, পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন সহ নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যের দাম বাড়ছে। বাড়ছে কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ। কিন্তু কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের উচিত মূল্য পাচ্ছেন না। কেরালার এলডিএফ সরকার ধানের সহায়ক মূল্য ২৮০০ টাকা কুইন্টাল দরে সংগ্রহের ব্যবস্থা করলেও আমাদের রাজ্যের কৃষকরা স্বল্প মূল্যে তা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। আলু, পেঁয়াজ, পাট প্রভৃতি ক্ষেত্রে একই চিত্র। ঋণের চাপে কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
আমাদের রাজ্যে দৈনিক মজুরি খেতমজুরের ক্ষেত্রে দৈনিক ৩০৫ টাকা, যা কেরলে ৭২৬ টাকা। একইভাবে নির্মাণ শ্রমিকদের ক্ষেত্রে আমাদের রাজ্যে দৈনিক ৩৩৩ টাকা হলেও তা কেরলে ৮৩৭ টাকা, আড়াইগুণ বেশি। বামফ্রন্টের সময়ে কৃষি শ্রমিকের মজুরি ১৯৭৬-৭৭ থেকে ২০০৩-০৪-এর মধ্যে বেড়েছিল ১০.৫ গুণ।
নাবার্ড-এর রিপোর্ট অনুসারে কৃষিজীবী পরিবারের মাসিক আয়ের নিরিখে দেশের আধপেটা খাওয়া রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের স্থান ২২তম। শীর্ষস্থানে অবস্থিত পাঞ্জাবের কৃষিজীবী পরিবারের মাসিক আয় গড়ে ২৩,১৩৩ টাকা, সেখানে আমাদের রাজ্যে ৭,৭৫৬ টাকা। অথচ শাসকদলের নেতা-নেত্রী, কৃষকের আয় দ্বিগুণ হওয়ার গালগল্প দিয়ে চলেছেন।
আমাদের রাজ্যে শাসকদল লুটেপুটে কৃষি সমবায়গুলিকে লাটে তুলে দিয়েছে। তাই কৃষকের মহাজনি ঋণ বাড়ছে। নাবার্ডের হিসাবে হেক্টর প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের পরিমাণ কেরালাতে যেখানে ৩,৬৮,০০০ টাকা, সেখানে আমাদের রাজ্যে তা মাত্র ৫৫,০০০ টাকা।
পঞ্চায়েতঃ সত্য প্রতিষ্ঠায়...
যে কায়েমি স্বার্থবাদীরা পেশী শক্তির দ্বারা পঞ্চায়েতের দখল নিয়েছে তাকে দখলমুক্ত করতে হবে। এ প্রসঙ্গে সত্যব্রত সেনের কথা, ‘‘দরিদ্ররাই দারিদ্র্য দূর করার উদ্যোগ নেবে। অবশ্য কাজের ক্ষেত্র সীমিত। ...যদিও একটা দিকের কোনো সীমা নেই, তা হলো মানুষের চেতনাকে ক্রমশ বাড়িয়ে তোলা যে - বর্তমান সমাজব্যবস্থাকে বদলাতে হবেই।’’ এ বিষয়ে তাঁর পরামর্শ, ‘‘আমাদের লক্ষ্যের সঙ্গে যদি দৈনন্দিন কাজের কোনো সাযুজ্য না থাকে তবে পথ হারানোর পথিকের মতো শুধু ঘুরে বেড়ানোই চলতে থাকে।’’ মোরা পথ হারানো পথিক নই - এই সত্য প্রতিষ্ঠা করার সময় শুরু এখন থেকেই।