E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

আগামীদিনের কর্তব্য



বর্তমান সময়ে সমগ্র বিশ্বের এক বড়ো অংশ করোনা (কোভিড-১৯) ভাইরাসে আক্রান্ত। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতন ২১২টি দে‍‌শের ৮০লক্ষাধিক মানুষ এই ভয়ঙ্কর রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা ৪লক্ষাধিক। আক্রান্ত এবং মৃতের নিরিখে প্রথম স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তৃতীয় স্থানটি ভারতের। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে বিশ্ব অর্থনীতির উপর এর ব্যাপক নেতিবাচক প্রতি‍ক্রিয়া পড়েছে। বিশেষত, পর্যটন ব্যবসা, যাতায়াত ব্যবস্থা, তৈলক্ষেত্র, বিভিন্ন পরি‍‌ষেবা ব্যবস্থা এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। এর ফলে উৎপাদন, ব্যবসা বাণিজ্য এবং বিনিয়োগও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সঙ্কটের প্রতিক্রিয়া শেয়ার বাজারেও। নব্য-উদারনীতির পথ ধরে বিপুল পুঁজি লাভের মধ্য দিয়ে শেয়ার বাজারে যে তেজিভাব পরিলক্ষিত হয়েছিল, তা এখন প্রায় অস্তগামী। শেয়ার বাজারের অন্তিম দশার পরিণতিতে প্রকৃত অর্থনীতিও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কর্পোরেট সংস্থাগুলির বিপুল ঋণ আর্থিক বাজারে টালমাটাল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, যার তুলনা করা হচ্ছে ২০০৮ সালের আর্থিক মহামন্দার সাথে।

বিশ্ব পর্যায়ে এই রোগটির প্রাদুর্ভাব প্রাথমিক পর্বে চীনে হলেও, বর্তমানে চীন এই রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে। ইতালিতে এই রোগ মহামারী বা অতিমা‍‌রী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ইতালিতে মৃতের সংখ্যা প্রাথমিকস্তরে ছিল সর্বাধিক। শুধু ইতালি নয়, ইয়োরোপের বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে এই রোগের বিস্তৃতি ঘটেছে। আফ্রিকা মহাদেশ এবং কিউবা এখনও এই রোগের আক্রমণের বাইরে অবস্থান করছে।

ভারতে এই সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। বারবার অভিযোগ উঠছে যথেষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে না। পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা কম। হাসপাতালগুলিতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহের ঘাটতি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘জনতা কারফিউ’ পালনের আহ্বান জানিয়ে‍‌ছিলেন। শারীরিক দূরত্ব রক্ষার জন্য টানা ও পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সাহসের সাথে এই রোগের মোকাবিলা করা দরকার। এক্ষেত্রে কিছু জরুরি প্রসঙ্গ সামনে এসেছে, যা অবশ্যই বিবেচনার মধ্যে আনতে হবে।

প্রথমত পরীক্ষার প্রসার ঘটানো খুবই জরুরি। প্রচুর সংখ্যক মানুষের জন্য কিটস্‌-এর ব্যবস্থা করতে হবে, যাদের জ্বর, সর্দির ন্যায় উপসর্গ রয়েছে। দ্বিতীয়ত, বিনামূ‍‌ল্যে ভাইরাস পরীক্ষা, হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা, আইসোলেশন ওয়ার্ড ও ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় অর্থ খরচের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে এবং সংক্রমণে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চি‍‌কিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে যুক্ত করতে হবে— যা এখনও দে‍‌শের সর্বত্র হয়নি।

করোনার আক্রমণ এমন সময়ে সংগঠিত হ‍‌য়েছে যখন এর পূর্ব থেকেই জাতীয় অর্থনীতি ব্যাপক সংকটে নিমজ্জিত। আর্থিক বৃদ্ধির হার ২০১৯-২০২০ অর্থবর্ষে ৩ শতাংশের কম। দেশব্যাপী আয় ও সম্পদের বৈষম্য ক্রমবর্ধমান। দারিদ্র্য ও বেকারি বেড়েই চলেছে।। কৃষকদের দুর্দশা ক্রমবর্ধমান। খাদ্যদ্রব্য সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি ঘটেই চলেছে।

এই রকম পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সাধারণ মানুষের জীবনে নামিয়ে এনেছে এক দুর্বিষহ অবস্থা। ইতিমধ্যেই বিশেষ করে গরিব ও অসংগঠিত অংশের শ্রমজীবীরা দুর্দশায় প‍‌ড়েছে। তাঁদের কিছুটা স্বস্তি দিতে সক‍‌ল‍‌কে সাড়ে ৭ হাজার টাকা (আয়কর দাতাদের বাদ দিয়ে) দিতে হবে। এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের দায়িত্ব কেন্দ্রকে নিতে হবে। খাদ্যনিগমের গুদামগুলিতে মজুত সাড়ে সাত কোটি টন খাদ্যশস্যকে ব্যবহার করে পরিযায়ী শ্রমিকসহ বিপিএল এবং এপিএল’র অন্তর্ভুক্ত সমস্ত পরিবারকে বিনামূল্যে রেশন দিতে হবে। একই সাথে রেগায় ২০০ দিন কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। সমস্ত কর্মপ্রার্থীদের জন্য কর্মসংস্থানের কিছু ব্যবস্থা করতে হবে।

দেশের বর্তমান সঙ্কটে কেন্দ্রীয় সরকারের দরিদ্র জনগণের হাতে নগদ অর্থ তুলে দেওয়া প্রয়োজন। কারণ কৃষি ও শিল্প, ব্যবসা বাণিজ্যে কর্মরত বিপুল সংখ্যক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। বিশেষত, পরিযায়ী শ্রমিকদের অবস্থা অবর্ণনীয়। এদের নিজ রাজ্যে প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি বিশেষত এরাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত সরকারের ভূমিকা চরম নিন্দনীয়। শুধু এই প্রশ্নেই নয়, করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার প্রশ্নে আক্রান্ত ও মৃত মানুষের প্রকৃত তথ্য প্রদানে এই সরকার কারচুপি করে চলেছে।

দেশের এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের শ্রেণি অবস্থানের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। করোনা মোকাবিলার প্যাকেজের মধ্যে একদিকে যেমন রয়েছে চরম ভাঁওতা, তেমনই অন্যদিকে রয়েছে বৃহৎ পুঁজিপতিদের স্বার্থ রক্ষার প্রয়াস। একাজ কর‍‌তে নির্বিচারে বেসরকারিকরণের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্বের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হ‍‌য়েছে। অন্যদিকে দেশের শ্রম আইনগুলি মালিকদের স্বার্থে পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে।

এককথায় বলা চলে যে, দেশের জনগণের একদিকে জীবন এবং অন্যদিকে জীবিকা উভ‌য়ই আক্রান্ত। ফলে শ্রমজীবী জনগণের রাস্তায় নেমে লড়াই করা ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। ইতিমধ্যেই সেই লড়াই শুরু হয়েছে। আগামীদিনে তাকে আরও বেগবান করতে হবে।