চালচোর ত্রাণচোর দুর্নীতিবাজ তৃণমূল কংগ্রেস দূর হঠো
রাজ্য প্রশাসনে দু’দফা মিলিয়ে প্রায় এক দশক হতে চলল তৃণমূল পরিচালিত সরকার প্রতিষ্ঠিত। তাদের (অপ)শাসনে এই রাজ্য সবদিক থেকে ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা থেকে শুরু করে কর্মসংস্থান - সমস্ত দিকেই এই চিত্র প্রতিফলিত। এদের এই কুকীর্তিকে পুঁজি করে সাম্প্রদায়িক শক্তি বিজেপি-আরএসএস নেতৃত্ব জনগণের মধ্যে বিভাজন প্রক্রিয়া গভীর করতে উদ্যত হয়েছে। সাম্প্রতিককালে কোভিড ১৯ পরিস্থিতিতে রেশনে গরিব মানুষের মধ্যে চাল-গম বিতরণ এবং আমফান ঘূর্ণি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সাহায্য ও রিলিফ প্রদানকে কেন্দ্র করে দুর্নীতির যে প্লাবন বয়ে গেছে তা দেখে রাজ্যবাসীর মাথা হেঁট হয়ে গেছে। গরিব মানুষের জন্য রেশনে বিনামূল্যে চাল-গম বণ্টনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক দুর্নীতির ঘটনা রাজ্যের সর্বত্র প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়ে। প্রকৃত রেশনগ্রাহকদের কাছে খাদ্যশস্য নির্দিষ্ট পরিমাণ মতো বা আদৌ পৌঁছতে না দিয়ে তা আত্মসাৎ করা নৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যস্তর থেকে তালুক স্তরের নেতারা এই দুর্নীতিতে যুক্ত হয়ে পড়েন। এরা পঞ্চায়েতের বিভিন্ন স্তরের পদাধিকারী। এই এক দশকে এদের অধিকাংশই সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে গ্রাম-শহরে ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে এরা দোতলা-তিনতলা অট্টালিকার অধিকারী। এদের রয়েছে মোটর বাইক, ট্রাক্টর প্রভৃতি। দুর্নীতির মধ্যে দিয়েই এসব সম্পদের অধিকারী হয়েছে তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। সরকারি কাজে বরাদ্দকৃত অর্থের এক বড়ো অংশ আত্মসাৎ করাই এদের আয়ের প্রধান উৎস।
সরকারি বরাত যিনি পাচ্ছেন বাধ্যতামূলকভাবে কাজ শুরু করার আগেই তাকে বিশাল অঙ্কের ঘুষ দিতে হয়। রাজ্যে এইভাবে অর্থ আত্মসাৎ করার প্রক্রিয়াকে ‘কাটমানি’ বলে বিশেষিত করা হয়। কাটমানি শুধু যে সরকারি বরাত পাওয়ার ক্ষেত্রে চালু আছে তাই নয়, স্কুল কলেজে ভরতি, প্রাথমিক বা মাধ্যমিক শিক্ষক নিয়োগ, সরকারি দপ্তর থেকে যে কোনো ধরনের ঋণ, ভাতা এমন কি জন্ম-মৃত্যুর শংসাপত্র পাওয়ার জন্য তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের ঘুষ দিতে হয়। অর্থাৎ রাজ্যের তৃণমূল সরকারের শাসনকালে ও তাদের নেতৃত্বে কাটমানি এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। দৈনন্দিন জীবনে তৃণমূল কংগ্রেস ও কাটমানি এখন সমার্থক।
আমফান ঘুর্ণি ঝড়ে রাজ্যে দশ-বারোটি জেলায় জনগণ বিপর্যস্ত হয়েছেন। এদের ত্রাণবন্টনে, বিশেষত যাদের ঘরবাড়ি ভেঙেছে, তা মেরামতির জন্য ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা দেওয়াকে কেন্দ্র করে নিকৃষ্টতম দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ করা হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ হলো, ত্রাণ বা গৃহ মেরামতির অর্থের প্রায় সবটাই শাসকদলের নেতা-কর্মী, পঞ্চায়েতের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধি, তাদের আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠরা আত্মসাৎ করেছে। রাজ্যের অধিকাংশ সংবাদপত্র প্রচারমাধ্যমে এব্যাপারে ছবি সহ নামধাম প্রকাশিত হয়েছে। হুগলি জেলার এক তৃণমূলী গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ত্রাণের দাবি করে যে ১৬৬ জনের তালিকা পেশ করেছেন তার মধ্যে শতাধিক ব্যক্তি ও প্রধানের টেলিফোন নম্বর একই। এর দ্বারাই স্বজনপোষণের নির্লজ্জতা প্রমাণিত হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার রায়দিঘিতে এক তৃণমূল কংগ্রস কর্মীর ত্রাণে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের শাস্তি হিসাবে প্রকাশ্যস্থানে গ্রামবাসীরা কান ধরে তাকে ওঠবোস করিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের এই দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী-আহুত সর্বদলীয় সভায় সিপিআই(এম) সহ বামপন্থী ও সহযোগী দলগুলি তীব্র প্রতিবাদে ছিল সোচ্চার। এর ফলে শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী ঢোঁক গিলে এই সব অভিযোগ স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁর কৈফিয়ত এই যে, তাড়াহুড়ো করে তালিকা প্রস্তুত করতে গিয়ে সামান্য কিছু গরমিল থেকে গেছে।
রাজ্য শাসকদলের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিজেপি’র ভূমিকা ছিল অত্যন্ত নিন্দনীয়। তাদের সমস্ত প্রতিবাদ টেলিভিশনের পর্দায় সীমাবদ্ধ। রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ-আন্দোলনে তারা শামিল হয়নি। বিপরীতপক্ষে বিজেপি পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলিও দুর্নীতির প্রশ্নে একই পথের পথিক। অপরপক্ষে অনেক জায়গায় বিজেপি’র সমর্থন নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস এইসব অপকর্ম চালিয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের এইসব কার্যকলাপের বিরুদ্ধে রাজ্যের জনগণ সোচ্চার প্রতিবাদে এগিয়ে এসেছে। অনেক জায়গায় তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিডিও বা পঞ্চায়েত অফিস ঘেরাও করে এইসব অবৈধ তালিকা পরিবর্তন করতে বাধ্য করেছে। এর পাশাপাশি বামপন্থীদের নেতৃত্বে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, রাজ্যবাসীর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ৫০ কোটি টাকার খাদ্যশস্য ও ত্রাণসামগ্রী বণ্টন করা হয়েছে। সবজিবাজার, কমিউনিটি কিচেন প্রভৃতির মাধ্যমে বামপন্হীরা এই ত্রাণকার্য পরিচালনা করেছে। অনেক জায়গায় তৃণমূলী হামলাকে প্রতিহত করেই তাদের এই কাজ করতে হয়েছে। রাজ্যের জনগণ দেখছেন, বামপন্হীরা সরকারে নেই কিন্তু দরকারে আছে। রাজ্যের আগামীদিনের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে এগুলি ইতিবাচক দিক, এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।