E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

গরবাচভ এবং আজকের রাশিয়া

শান্তনু দে


গরবাচভ প্রয়াত। মিখাইল গরবাচভ, সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ নেতা, যিনি তাঁর নিজের জনগণের স্বপ্ন ও প্রত্যাশার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। একজন আধুনিক জুডাস!

গরবাচভের শারীরিক মৃত্যুর গুরুত্ব সামান্যই। মাওয়ের কথা ধার করলে ‘পাখির পালকের চেয়েও হালকা’! আসলে বিশ্বজুড়ে শ্রমজীবী জনগণের হৃদয়ে বহু আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

গরবাচভ সেদিনই মারা গিয়েছেন, যেদিন তিনি মানব ইতিহাসের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কবর খোঁড়ার সিদ্ধান্ত সচেতনভাবে নিয়েছেন। তিনি সেদিনই মারা গিয়েছেন, যেদিন তিনি পেরেস্ত্রোইকার প্রতিবিপ্লবী প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দিয়ে বলশেভিক বীর যোদ্ধাদের মহান সমাজতান্ত্রিক স্বদেশভূমির ডেথ সার্টিফিকেটে সই করেছেন। তিনি সেদিনই মারা গিয়েছেন, যেদিন তিনি লেনিন, স্তালিন, ঝুকভ, গ্যাগারিনের স্বদেশভূমি, লক্ষ-কোটি মানুষ যাঁরা নতুন সমাজ নির্মাণের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের স্বপ্ন-প্রত্যাশায় বেপরোয়া বুলডোজার চালিয়েছেন। তিনি সেদিনই মারা গিয়েছেন, যেদিন তিনি মহান নভেম্বর বিপ্লবের অর্জিত সাফল্য, সামাজ্যবাদী ঘেরাটোপ ভেঙে সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি নির্মাণ - যে অর্থনীতিকে ছুঁতে পারেনি গতশতকের তিরিশের মহামন্দা - তাকে অবলীলায় গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি সেদিনই মারা গিয়েছেন, যেদিন তিনি ফ্যাসিবিরোধী লড়াইয়ের গৌরবময় জয় - লক্ষ লক্ষ সোভিয়েত জনগণের আত্মত্যাগ, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে পরমাণু শক্তির হুমকির মুখে বিশ্ব শান্তি রক্ষায় তাদের অনন্য ভূমিকা, সর্বোপরি শ্রমিকশ্রেণির সংবিধান - সবকিছুই বেমালুম অস্বীকার করেছেন। শুধু অস্বীকার নয়, গ্লাসনস্তের নামে কালিমালিপ্ত করেছেন। তিনি সেদিনই মারা গিয়েছেন, যেদিন তিনি সাম্রাজ্যবাদের অস্তিত্বকে চায়ের পেয়ালায় মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে উড়িয়ে দিয়েছেন, রেগান-বুশের প্রিয়পাত্র হয়েছেন।

যদিও, সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিবিপ্লবী প্রক্রিয়ার আবিষ্কারক গরবাচভ নন। এই প্রক্রিয়ার শুরু আসলে পাঁচের দশকে। সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির বিংশতিতম কংগ্রেস থেকে। যেখানে নেওয়া হয় সুবিধাবাদ ও সংশোধনবাদের একগুচ্ছ পদক্ষেপ।

গত শতকের বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে রয়েছে দু’টি ‘দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন’: একটি অক্টোবরের দিনগুলি, যার বর্ণনা রয়েছে ওই শিরোনামে লেখা জন রিডের বইয়ে, আরেকটি সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির বিংশতিতম কংগ্রেস (১৪-২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৬)। দু’টি ঘটনাই আচমকা এবং অপরিবর্তনীয়ভাবে বিভাজন রেখা টেনে দিয়েছিল ‘আগে’ এবং ‘পরের’ মধ্যে... সহজ করে বললে, অক্টোবর বিপ্লব তৈরি করেছিল একটি বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলন, যাকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল বিংশতিতম কংগ্রেস। বলেছেন এরিক হবসবম।

একথা ঠিকই, সোভিয়েত সমাজতন্ত্রে গুরুতর ত্রুটি-বিচ্যুতি ও বিকৃতি দেখা দিয়েছিল। উৎপাদিকা শক্তির বিকাশ রহিত হচ্ছিল। প্রকট হচ্ছিল বণ্টনের সমস্যা। ঘাটতি ছিল সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের অনুশীলনে।

গরবাচভ কেবল তাঁর পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব, তার সবটুকু করেছেন - যাতে সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার পতনকে ত্বরান্বিত করা যায়, ভেঙে টুকরো-টুকরো করে দেওয়া যায় সোভিয়েত ইউনিয়নকে। বস্তুত, ১৯৮৬-তে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির সাতাশতম কংগ্রেসেই পার্টি নেতৃত্ব চলে যায় বিশ্বাসঘাতক প্রতিবিপ্লবীদের দখলে।

কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরে প্রতিবিপ্লবী চক্রের (শেভারনাদজা, ইয়াকোভেলেভ, ইয়েলিৎসিন প্রভৃতি) পাশাপাশি, গরবাচভ সোভিয়েতের জনগণকে সমাজতন্ত্রের পুনরুজ্জীবনের প্রতিশ্রুতি দিলেও, তাঁর নেতৃত্ব নেয় সংশোধনবাদী ও প্রতিক্রিয়ার সংস্কারের পদক্ষেপ - যা সুগম করে দেয় পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক সম্পর্কের বৈধতার রাস্তা।

পেরেস্ত্রোইকা (পুনর্গঠন) - প্রতিবিপ্লবের ‘ট্রয়ের ঘোড়া’ ছাড়া বিশেষ কিছু ছিল না।

কমিউনিজমকে ধ্বংস করাই ছিল গরবাচভের একমাত্র লক্ষ্য। ১৯৯৯, তুরস্কের আঙ্কারায় আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আলোচনাচক্রে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেওয়ার সময় এক সাক্ষাৎকারে তিনি অকপটে বলেনঃ ‘‘আমার লক্ষ্য ছিল কমিউনিজমকে ধ্বংস করা, সমস্ত মানুষের উপর একনায়কত্বকে ধ্বংস করা। এই অভিযানে আমাকে সমর্থন করছিলেন, আমাকে আরজি জানিয়েছিলেন আমার স্ত্রী, যিনি আমার অনেক আগে থেকেই এই অভিমত পোষণ করতেন। আমি বিলক্ষণ জানতাম, এটা আমি তখনই করতে পারব, যদি আমি হতে পারি নেতৃস্থানীয় কর্মী। এজন্য আমার স্ত্রী আমাকে সর্বোচ্চ পদে বসার কথা বলেন। যখন আমি আসলে পশ্চিমের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলাম। আমার মন তৈরি হয়ে গিয়েছিল চিরদিনের জন্য। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আমাকে অবশ্যই সিপিএসইউ এবং ইউএসএসআর-এর পুরো যন্ত্রকেই গুঁড়িয়ে দিতে হবে। এবং আমাকে এটা করতে হবে অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির ক্ষেত্রেও। আমার আদর্শ সামাজিক গণতন্ত্রের পথ। একমাত্র এই ব্যবস্থাতেই সকল মানুষ সুফল পাবেন। এই যে লক্ষ্য, আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাকে অবশ্যই তা পূরণ করতে হবে। আমি ইয়াকোভেলেভ এবং শেভারনাদজার মতো সমমনোভাবাপন্ন বন্ধুদের পেয়েছি, তাঁরা সবাই ইউএসএসআর ভেঙে যাওয়া এবং কমিউনিজমের পরাজয়ের জন্য ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।’’

আজ কেমন আছে রাশিয়া?

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে টুকরো-টুকরো। রাশিয়া, ইউক্রেন, বেলারুশ, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, কিরগিজিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, জর্জিয়া, আজারবাইজান, মলদোভা, আর্মেনিয়া, এস্তোনিয়া, লাতভিয়া এবং লিথুয়ানিয়া।

সোভিয়েত সাধারণতন্ত্রগুলির মধ্যে বৃহত্তম রাশিয়া আজ অন্যতম সমৃদ্ধ ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে। ইউক্রেনের যুদ্ধ আসলেই সোভিয়েত বিপর্যয়ের প্রত্যক্ষ পরিণতি।

‘ইউক্রেনে একদিন যে বীজ বুনেছিল, এখন তারই ফসল কাটছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।’ তাক লাগিয়ে দেওয়া শিরোনাম মার্কিনমুলুক থেকেই প্রকাশিত প্রায় শতাব্দী প্রাচীন দ্য প্রগ্রেসিভ পত্রিকায়।

অথচ, সোভিয়েত পতনের এক বছর আগে, তৎকালীন মার্কিন বিদেশসচিব জেমস বেকার রাশিয়ার কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, ‘ন্যাটো পূর্বদিকে এক ইঞ্চিও এগোবে না’, যদি মস্কো দুই জার্মানির মিলনে সম্মতি দেয়। পূর্বদিকে এক ইঞ্চিও নয় অর্থঃ পূর্ব বার্লিনের পূর্বে ‘এক ইঞ্চিও এগোবে না’ ন্যাটো।

গর্বাচভ সেই চুক্তিতে সহমত হয়েছিলেন। কিন্তু, ওয়াশিংটন তার কথা রাখেনি।

সেদিন সবাই আশা করেছিলেন এবারে ন্যাটোকে গুটিয়ে দেওয়া হবে। কারণ, যে উদ্দেশ্যে ন্যাটো তৈরি করা হয়েছিল, সেই সোভিয়েত ইউনিয়নই আর নেই। তাছাড়া, ন্যাটোর মোকাবিলার লক্ষ্যে যে ওয়ারশ চুক্তি হয়েছিল, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইয়োরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির বিপর্যয়ের পর তারই যখন অবসান হয়েছে, তখন ন্যাটোর প্রাসঙ্গিকতা আর কোথায়? ধাপে ধাপে নিরস্ত্রীকরণ এবং পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি কমানোর চুক্তিও সই হয়ে গিয়েছে। সেকারণে স্বাভাবিক ভাবনা ছিল ন্যাটোর আর কোনও প্রয়োজন নেই।

ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানের পর পেরিয়ে গিয়েছে তিন দশক তবু ন্যাটো কেন সম্প্রসারিত হচ্ছে? ভেঙে দেওয়ার পরিবর্তে কেন সে নিজেকে সম্প্রসারিত করে চলেছে?

আজ সোভিয়েত নেই। তাহলে শত্রু কে? আসলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ চায় বিশ্বজোড়া আধিপত্য।

ন্যাটোকে ভেঙে দেওয়ার পরিবর্তে তাই তারা তাকে আরও পূর্বদিকে সম্প্রসারিত করতে শুরু করে। লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং এস্তোনিয়ার মতো বাল্টিক রাষ্ট্র-সহ পোলান্ড, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, চেক সাধারণতন্ত্র, স্লোভাকিয়া, স্লোভানিয়া, রোমানিয়ার মতো পূর্ব ইয়োরোপের সাবেক ‘সোভিয়েত’ সাধারণতন্ত্রগুলির অধিকাংশই এখন ন্যাটোর শৃঙ্খলে। যুগোস্লাভিয়ার উপর বর্বর বোমাবর্ষণ-সহ ন্যাটো একাধিক যুদ্ধ চালিয়েছে বলকান অঞ্চলে। আর এখন রাশিয়া সীমান্তে ইউক্রেন, জর্জিয়াকে তাদের সদস্য করতে চাইছে।

১৯৯০ থেকে ন্যাটো আজ বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। সদস্য সংখ্যা ষোল থেকে বেড়ে এখন ৩০। পূর্ব ইয়োরোপ, বলকান ছাড়িয়ে এমনকী সামরিক হস্তক্ষেপ করেছে আফ্রিকায়। এবং মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ায়।

আবার এই রাশিয়া সেই রাশিয়া না!

সমাজতন্ত্র থেকে ধান্দার ধনতন্ত্রে! ২০১৬, দ্য ইকনমিস্ট পত্রিকার ‘ধান্দার ধনতন্ত্রের’ সূচকে এক নম্বরে রাশিয়া। ‘স্বাভাবিক’ বাজার অর্থনীতিও রূপায়িত হয়নি রাশিয়ায়। বরং, পরিণত হয়েছে এক অদ্ভূতুড়ে ধান্দার-রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদে। বলেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোশেফ স্টিগলিৎজ। ব্রিটিশ গার্ডিয়ান পত্রিকায় ‘রাশিয়া কেন উন্নতি করতে পারল না’ শিরোনামে লেখা নিবন্ধে।

বিশ্বের প্রধান অর্থনীতিগুলির মধ্যে সবচেয়ে অসম সমাজ!

সাতের দশকের শেষের দিকেও, মাত্র ০.২ শতাংশের আয় ছিল গড়পরতা মজুরির চেয়ে চারগুণ বেশি। আর এখন ধনীশ্রেষ্ঠ ১০ শতাংশ - দেশের ৮৭ শতাংশ সম্পদের মালিক। বিশ্বের প্রধান অর্থনীতিগুলির সবচেয়ে অসম সমাজ রাশিয়ায়। জানাচ্ছে ২০১৬’র ক্রেডিট সুইসের গ্লোবাল ওয়েলথ রিপোর্ট। যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই হার ৭৬ শতাংশ। আর ভি টি বি ক্যাপিটালের হিসেবে, রাশিয়ার ধনীশ্রেষ্ঠ ১ শতাংশের হাতে রয়েছে দেশের তাবৎ ব্যক্তিগত আমানতের ৪৬ শতাংশ (গার্ডিয়ান, ২৫ এপ্রিল, ২০১৭)।

নোবেলজয়ী ফরাসি অর্থনীতিবিদ, ‘ক্যাপিটাল ইন দ্য টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি’ গ্রন্থের লেখক টমাস পিকেটি দেখিয়েছেন রাশিয়াতে আবার ফিরে এসেছে জার-জমানা! তিনি দেখিয়েছেন, জার-জমানায় দেশের মোট আয়ের ৪৫-৫০ শতাংশ ছিল মাত্র ১০ শতাংশের কবজায়। সোভিয়েত-পর্বে তা ১৫-২০ শতাংশে নেমে এলেও, এখন আবার তা ফিরে গিয়েছে ৪৫-৫০ শতাংশে। ‘ফর্ম সোভিয়েত টু অলিগার্কসঃ ইনইকোয়ালিটি অ্যান্ড প্রপার্টি ১৯০৫-২০১৬’তে পিকেটি বলছেন, রাশিয়ায় ১ শতাংশের হাতে এখন মোট আয়ের ২০-২৫ শতাংশ। যা পূর্ব ইয়োরোপের দেশগুলির তুলনায় অনেকটা বেশি, যেখানে ১ শতাংশের হাতে ১০-১৪ শতাংশ।

১৯৯১, একজনও বিলিওনেয়ার ছিলেন না রাশিয়াতে। আর এখন, বিলিওনেয়ারের সংখ্যা ২০২০ সালে ৯৯ থেকে বেড়ে হয়েছে ১১৭। এই মহামারীর সময়েও যেখানে তাঁদের মিলিত সম্পদের পরিমাণ ৩৮,৫০০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৮,৪০০ কোটি ডলার (ফর্বস)। যেখানে গড়পরতা মাসিক মজুরি মাত্র ৬৯৭.৩৫ ডলার!

১৯৮৯, রাশিয়ায় দারিদ্র্যসীমার নিচে মানুষের সংখ্যা ছিল মাত্র ২ শতাংশ (দৈনিক ২ ডলার ধরে)। ১৯৯৮’র শেষে তা একলাফে বেড়ে দাঁড়ায় ২৩.৮ শতাংশ (বিশ্বায়ন ও তার অসন্তোষ, জোশেফ স্টিগলিৎজ)। এখন ১ কোটি ৯৬ লক্ষ রুশ, জনসংখ্যার ১৩.৩ শতাংশ রয়েছেন দারিদ্র্যসীমার নিচে। যদিও, এটি একেবারেই কমিয়ে দেখানো হিসেব। এই সময়ে ভারতের মতোই বদলে দেওয়া হয়েছে দারিদ্র্যের সংজ্ঞা। আজকের দারিদ্র্যের এই সূচক, ২০০০ সালে রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের প্রথম মেয়াদের গোড়ার চেয়ে অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে, যখন জনসংখ্যার ২৯ শতাংশ ছিল দারিদ্র্যসীমার নিচে। সেকারণে প্রকৃত দারিদ্র্যের সংখ্যা অনেক বেশি। রসস্ট্যাটের কিছু বিশেষজ্ঞ যেমন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, দরিদ্র অথবা দারিদ্র্যের মুখে থাকা মানুষের সংখ্যা অন্তত ৭০ শতাংশ!

কারা তৈরি করল এই ভুঁইফোড় বিলিওনেয়ারদের? কোন্‌ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনল সম্পদের এহেন কেন্দ্রীভবন? কে হারল রাশিয়ায়?

মানুষ উওরের সন্ধানে। সোভিয়েত জনগণ কিন্তু ভাঙনের বিরুদ্ধেই ছিলেন। পতনের আগে ১৯৯১’র ১৭ মার্চ গণভোটেও দেশের ৭৬ শতাংশ মানুষ মত দিয়েছিলেন ঐক্যবদ্ধ সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে।

এমনকী আজও, রাশিয়ার অধিকাংশ মানুষ ফিরতে চান সোভিয়েত ইউনিয়নে এবং সমাজতন্ত্রে। ২০২০, লেভাদা সেন্টারের জনমত সমীক্ষায় প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজনই (৭৫ শতাংশ) বলেছেন, দেশের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে ভালো সময় ছিল সোভিয়েত যুগ’!

জনপ্রিয়তার শীর্ষে স্তালিন। ২০২১, লেভাদা সেন্টারের জনমত সমীক্ষায় ৫৬ শতাংশই তাঁদের ‘মহান নেতা’ হিসেবে বেছে নিয়েছেন স্তালিনকে। পরে লেনিন, পুশকিন।

সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপর্যয়ের পরে অনেকেই মনে করেছিলেন এবারে কমিউনিস্ট পার্টি চলে যাবে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে! কিন্তু, তা হয়নি। বাড়ছে কমিউনিস্ট পার্টির জনপ্রিয়তা আর প্রভাব। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য সংখ্যা এখন ১ লক্ষ ৬২ হাজারের বেশি। রয়েছে ৮১টি প্রাদেশিক কমিটি। পার্টি শাখার সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি।

গত সেপ্টেম্বরে রুশ সংসদের নিম্নকক্ষ দুমার নির্বাচনে তাক লাগিয়ে দেওয়া সাফল্য পেয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি। রিগিং, অনলাইন ভোটে ব্যাপক কারচুপি সত্ত্বেও সমর্থনের হার সাড়ে পাঁচ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৮.৯৩ শতাংশ। আসন সংখ্যা পনেরো থেকে বেড়ে এখন ৫৭। এবং এবারেও দুমায় কমিউনিস্ট পার্টি দ্বিতীয় বৃহত্তম দল। সাইবেরিয়া ও দূর প্রাচ্যের একাধিক প্রদেশে জিতেছেন কমিউনিস্টরা। লেনিনের জন্মস্থান উলিয়ানোভস্কেও জিতেছেন কমিউনিস্টরা।