রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইকুয়েডরে বামপন্থী দিশায় পালাবদলের ইঙ্গিত
ইকুয়েডরে এগিয়ে বামপন্থীরা। প্রাথমিক পর্বের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বামপন্থী প্রার্থী পঁয়ত্রিশ-বছরের অর্থনীতিবিদ আন্দ্রেজ আরাউজ এগিয়ে থাকলেও তাঁকে পরবর্তী পর্বে ন্যুন্যতম ৫০ শতাংশ ভোট পেতে হবে। কারণ, ইকুয়েডরের সংবিধান অনুযায়ী, কোনও প্রার্থীকে প্রথম রাউন্ডেই জিততে হলে, পেতে হবে হয় ৫০ শতাংশের বেশি ভোট, নতুবা ৪০ শতাংশ সমর্থনের সঙ্গে থাকতে হবে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে ১০ শতাংশের ব্যবধান। যদি তা না হয়, তবে প্রথম দু’জনের মধ্যে হবে চূড়ান্ত পর্বের নির্বাচন। চূড়ান্ত পর্বের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এপ্রিলের ১১ তারিখে। প্রায় ১৩ মিলিয়ন বৈধ ভোটারের ৮১ শতাংশ এই সাধারণ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। আন্দ্রেজ আরাউজ পেয়েছেন ৩১ শতাংশের কিছু বেশি ভোট।
জনমত সমীক্ষায় শুরু থেকেই এগিয়ে ছিলেন বামপন্থী প্রার্থী পঁয়ত্রিশ-বছরের অর্থনীতিবিদ আন্দ্রেজ আরাউজ। ইউনিয়ন ফর হোপ (ইউএনইএস)-র প্রার্থী আরাউজের পিছনে রয়েছে প্রাক্তন বামপন্থী রাষ্ট্রপতি রাফায়েল কোরিয়ার সমর্থন। কোরিয়া সরকারে তিনি ছিলেন নাগরিক কল্যাণ এবং সংস্কৃতিমন্ত্রী। আগে ইকুয়েডরের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের অধিকর্তার দায়িত্বেও।
আরাউজের লড়াই দক্ষিণপন্থী প্রার্থী, দাপুটে ব্যবসায়ী, একসময়ের ব্যাঙ্কার গুয়েলয়ার্মো লাসোর সঙ্গে হবে বলে মূলত মনে করা হয়েছিল। কিন্তু তা হয়নি। ৭ ফেব্রুয়ারি ভোট হলেও কিন্তু পরবর্তী পর্বে কে আন্দ্রেজ আরাউজের প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন তা এখনও স্পষ্ট নয় ভোটের ফলে।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রাফায়েল কোরিয়াকে এবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না দেবার জন্য লাতিন আমেরিকায় মার্কিনী মদতের চেনা ছক অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। বামপন্থী রাফায়েল কোরিয়া দেশে গরিব মানুষের জন্য ভরতুকিযুক্ত ব্যবস্থা চালু করে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেছিলেন। গরিব মানুষের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা অটুট থাকায় সমস্যায় পড়ে নয়া-উদারনীতির সমর্থকরা। এইসময় বামপন্থী জোটের একদা নেতা লেনিন মোরেনো তাৎপর্যপূর্ণভাবে দল বদল করে রাষ্ট্রপতি হন। বন্ধ করে দেন জনমুখী সব প্রকল্প। মার্কিন লবি তাঁকে সমর্থন দেয়। কিন্তু দেশ জোড়া মুদ্রাস্ফীতি এবং বেকারি বেড়েছে তাঁর সময়। অবস্থা চরমে ওঠে কোভিড ১৯-এর দরুন। অসমর্থিত হিসেব অনুযায়ী, ইকুয়েডরে লাখো মানুষের মৃত্যু হয় মহামারীতে। এই পরিস্থিতিতে জনগণের আস্থা হারান দলত্যাগী লেনিন মোরেনো।
লেনিন মোরেনোর বিশ্বাসঘাতকতা, নয়া-উদারবাদী পথে হাঁটার চারবছর পর দেশকে অতীতের মতো নয়া-উদারনীতির বিকল্পের রাস্তায় ফেরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আরাউজ। প্রথম মাসেই ১০ লক্ষ গরির পরিবারের প্রত্যেকের জন্য ১,০০০ ডলার করে বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেছেন। ব্যয়সঙ্কোচের নীতি বন্ধের কথা বলেছেন, যা জ্বালানির উপর ভরতুকি ছাঁটাই করেছিল।
মোরেনোর সময় দেশের ঋণের পরিমাণ জিডিপি’র ২৬ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ শতাংশ। করোনাকালে বেকারত্বের হার গত সেপ্টেম্বরে ছিল ৮.৬ শতাংশ। ১ কোটি ৭০ লক্ষের দেশে সরকারি হিসেবে করোনায় মারা গিয়েছেন ১৫,০০০। নিউ ইয়র্ক টাইমসের হিসেবে প্রকৃত সংখ্যা বহুগুণ বেশি। মোরেনোর জনপ্রিয়তার হার নেমে এসেছে ৭ শতাংশ। সেকারণে আর প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাহস দেখাননি এবার।
চব্বিশটি প্রদেশের আইনসভা নির্বাচনে একইসঙ্গে ১৩৭ সদস্যের সংসদের নির্বাচনেও এগিয়ে বামপন্থীরা।