আফগানিস্তানঃ তালিবানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর
আফগানিস্তানের স্বাধীনতা দিবসের দিন কাবুলে জাতীয় পতাকা হাতে মহিলারা।
ব্রিটিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে ১৯১৯-এর ১৯ আগস্ট আফগানিস্তান পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে। এ বছর স্বাধীনতা দিবসে আফগানিস্তানের মানুষ দুয়ারে তালা দিয়ে ঘরের মধ্যে আতঙ্কে দিন কাটাতে বাধ্য হলেন। কাবুল শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত আশমাই পাহাড়ের গায়ে লেপ্টে থাকা অসংখ্য গৃহ নিষ্প্রদীপ রইল। অন্যান্য বছর এই বাড়িগুলো উজ্জ্বল আলোয় সেজে ওঠায় স্বাধীনতা দিবসের সন্ধ্যায় পুরো পাহাড়টাই উৎসবের আনন্দে আলোকজ্বল হয়ে ঝলমল করে। এতটাই উজ্জ্বল যে, আকাশে উড়তে থাকা বিমান থেকেও সেই ঝলমলানি দেখা যায়। কাবুল শহরের ওয়াজির আকবর খান, শহ্-র-এ-নও, পুল-এ-খিশতি, ম্যাক্রোরিয়ান, কারতে পারওয়ান, খাইরখানা, তৈমুনি ইত্যাদি পাড়া-মহল্লায় এই বছরের স্বাধীনতা দিবসের সন্ধ্যায় আলোর রোশনাই দেখা যায়নি। কাবুলের আকাশে আতশবাজি ওড়েনি। নিষ্প্রদীপ নিষ্প্রাণ শহরে এই ঐতিহাসিক দিনেই নিঃশব্দে বদলিয়ে গেল দেশের চরিত্র। ইসলামিক রিপাবলিক অফ্ আফগানিস্তান হয়ে গেল ইসলামিক এমিরেট অফ্ আফগানিস্তান। প্রজাতন্ত্র থেকে শাহিতন্ত্র।
প্রজাতন্ত্র থেকে শাহিতন্ত্রে অবনয়নের লগ্নে কাবুলের বিভিন্ন চহরাই বা চার রাস্তার মোড়ে লাল-সবুজ-কালো রঙের জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে ১৯১৯-এর ১৯ অগস্টের অর্জিত স্বাধীনতার ১০২তম বার্ষিকী উদযাপন করলেন একদল স্বাধীনচেতা মহিলা। অবশ্যই তাঁরা বোরখা পরিহিতা। আফগানিস্তান যখন প্রজাতন্ত্র ছিল অর্থাৎ একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দুই দশকে, তখনও মহিলাদের অধিকাংশই বোরখার আড়ালেই প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে অভ্যস্ত ছিলেন। বিভিন্ন পেশায় যুক্ত মহিলারাও কর্মক্ষেত্রে মাথায় হিজাব পরে কাজ করলেও সাধারণত বোরখা পরিহার করে রাস্তায় চলাফেরা করতেন না। সঙ্গীতশিল্পী, খেলোয়াড় বা টিভির পর্দায় উপস্থিত অভিনেত্রী, সঙ্গীত শিল্পী সংবাদপাঠিকা, চিকিৎসক, নার্স, এককথায় সমস্ত মহিলা বোরখা পরিধানে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন।
নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থাকা সমাজ আসলে প্রতি মুহূর্তে মানসিকভাবে নিরাপত্তাহীনতায় কালাতিপাত করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। সেটাই স্বাভাবিক। তালিবান শাসনের প্রথম সংস্করণ অর্থাৎ ১৯৯৬-২০০১ বা তার আগের দশ বছরের মুজাহাদিন, আল-কায়েদা, তালিবান ইত্যাদি নানানরকমের কট্টর ধর্মীয় মৌলবাদী সন্ত্রাস আফগানিস্তানের সমাজকে যে ভাবে প্রভাবিত করেছে যে তার থেকে সহজে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়। এই বাস্তবিকতা মেনে নিয়েই আফগান মহিলা কর্মক্ষেত্র সামলিয়ে দোকান-বাজার, মল-সুপারমার্কেট পরিক্রমা করতেন এবং নিয়মিত বিউটি পার্লারেও উপস্থিত হতেন। হঠাৎ করে ২০২১-এর ১৫ অগস্টের পর বোরখা পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এমন নয়। গত দু' দশকে তো বটেই এমনকি ১৯৮৫ থেকেই এমনটাই ছিল আফগানিস্তানের প্রচলিত রীতি।
।। দুই ।।
গত ১৫ অগস্ট মাত্র ঘণ্টাখানেকের বৈঠকের পর তালিবান আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে বহুলভাবে প্রচারিত হলো কাবুলের পতন হয়েছে। বাস্তবে কোনো পতন বা দখল হয়নি। ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে বা পরে তেমন কোনো ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের খবর পাওয়া যায়নি। দোহা চুক্তিকে মান্যতা দিয়ে ২০২১-এর এপ্রিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন যে, ৩১ অগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সমস্ত মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। তার অব্যবহিত পরেই বিশেষত মে মাস থেকে দেশের উত্তর প্রান্তের সীমান্ত এলাকা জুড়ে তালিবান বিভিন্ন প্রদেশের দখল নেওয়া শুরু করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া আধুনিকতম আগ্নেয়াস্ত্রে সুসজ্জিত আফগানিস্তানের সরকারি সেনাবাহিনী তেমন কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আত্মসমর্পণ করেছে। তালিবান ক্রমশ পশ্চিম সীমান্তের প্রদেশগুলোর দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। এমনকী হেরাটের নেতা যিনি এককালে মুজাহাদিন বাহিনীর নেতৃত্ব দিতেন পরে হামিদ কারজাই মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন এবং যাঁর নিজস্ব সৈন্যবাহিনী আছে বলে শোনা যায়, তিনিও তালিবানের সঙ্গে কোনো বিবাদ-বিতর্ক-সঙ্ঘর্ষে জড়িয়ে না পড়ে সমঝোতার রাস্তায় হেঁটেছেন। উত্তর ও পশ্চিম সীমান্তের প্রদেশগুলি মোটামুটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দখল করার পর তালিবান দেশের পূর্ব ও দক্ষিণ প্রান্তের পাকিস্তান সীমান্তের প্রদেশগুলির দিকে নজর দেয়। জুলাই মাসের শেষ দিকে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয় যে উত্তরের তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তান পশ্চিমের ইরান এবং দক্ষিণ ও পূর্বের পাকিস্তান সীমান্তের প্রায় সব কটি প্রদেশে তালিবানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। একমাত্র জালালাবাদ এলাকার পাকিস্তান সীমান্তে অবস্থিত তোরহাম তালিবান তখনও দখল করেনি। পাকিস্তান থেকে ডাল, আটা ইত্যাদি খাদ্যসামগ্রী আনার জন্য সম্ভবত ১৫ অগস্ট কাবুলে পৌঁছনোর কয়েক ঘণ্টা আগে পর্যন্ত তোরহাম সীমান্ত তালিবান নিজের নিয়ন্ত্রণে আনেনি। প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে চলতে থাকা দেশ দখলের পরিক্রমায় কোথাও তেমন কোনো বড়ো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সংবাদ পাওয়া যায়নি।
কাবুলে ক্ষমতাসীন হওয়ার আগে এবং পরে তালিবান যে বিবৃতি দিয়েছে তাতে দোহা চুক্তির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তালিবানের মধ্যে স্বাক্ষরিত দোহা চুক্তি অনুযায়ী তালিবানের হাতে আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতা তুলে দেওয়ার কথা ছাড়া তালিবান নতুন কোনো কথা বলেনি। বাস্তবে তাই হয়েছে। কাবুলের রাষ্ট্রপতি ভবনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ঘণ্টাখানেক আলোচনার পর ১৫ অগস্ট, ২০২১ দ্বিপ্রহরে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর হয়। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি গোপনে দেশ ছেড়ে চলে যান। অর্থাৎ ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় কারো পরাজয় হয়নি। আবার কেউ পশ্চাদপসরণ করেনি।
দোহা-তে ২০২০-র ২৯ ফেব্রুয়ারি তালিবানের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। (সূত্র: https://www.state.gov/wp-content/uploads/2020/02/Agreement-For-Bringing-Peace-to-Afghanistan-02.29.20.pdf) এই চুক্তি অনুযায়ী পরবর্তী চোদ্দো মাসের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর সৈন্যবাহিনী আফগানিস্তান থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। অর্থাৎ ২০২১-এর ৩০ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর সৈন্যবাহিনী আফগানিস্তান থেকে চলে যাওয়ার কথা ছিল। আফগানিস্তান সরকারের এই চুক্তিতে কোনো ভূমিকা ছিল না। দোহা বৈঠকের পরবর্তী আলোচনায় প্রথমে ৩১ মে এবং পরে ৩১ অগস্ট, ২০২১ তারিখকে চূড়ান্ত দিন হিসেবে ধার্য করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সেনা অপসারণের ব্যাপারে এই তারিখের উপর প্রথম থেকেই জোর দিয়ে যাচ্ছিলেন। পরে তিনি সুর বদলানোয় তালিবান গলা উঁচিয়ে ৩১ আগস্ট তারিখের বিষয়ে জোর দেয়। এবং প্রয়োজনে হুঁশিয়ারি বার্তা পাঠাতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সি আই এ-র অধিকর্তা গোপনে কাবুলে এসে তালিবান নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলে সংবাদপত্রে প্রচারিত হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে যে, তারপরই পেন্টাগনের পরামর্শে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ৩১ অগস্টের সময়রেখা মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন।
।। তিন ।।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর সৈন্যবাহিনীর আফগানিস্তান পরিত্যাগ নিশ্চিত হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে যে, আফগানিস্তানে প্রচুর পরিমাণে যুদ্ধাস্ত্র থেকে যাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে গত দুই দশকে যে সোয়া দুই লক্ষ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে তার অধিকাংশই যুদ্ধের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সাজসরঞ্জাম কেনার জন্য খরচ হয়েছে। অস্ত্র উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলি এই সুবাদে গত দুই দশক তো বটেই তার অনেক আগে থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সঙ্গে চুটিয়ে ব্যবসা করেছে। প্রশিক্ষণের পর আফগানিস্তানের সরকারি সেনাবাহিনীর প্রায় তিন লক্ষ সৈন্যের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এই বিপুল সংখ্যক অস্ত্রের একটা অংশ। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সেনাবাহিনী যে সব যুদ্ধাস্ত্র, ফৌজি গাড়ি, ট্যাঙ্ক, হেলিকপ্টার ইত্যাদি ব্যবহার করত তাও ফেলে রেখে আফগানিস্তান পরিত্যাগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে যে, তালিবান শাসিত আফগানিস্তানে থেকে গেল বিপুল অস্ত্রসম্ভার।
খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়েছে যে, ২০১৩ থেকে ২০১৬-র মধ্যে আফগানিস্তানের সেনাবাহিনী বা আফগান ন্যাশনাল সিকিউরিটি ফোর্সকে ৬ লক্ষেরও বেশি লাইট ওয়েপন বা বন্দুক-রাইফেল জাতীয় হালকা অস্ত্রশস্ত্র দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধে ব্যবহৃত ৮০ হাজারের বেশি অত্যাধুনিক মাইন নিরোধক গাড়িও দেওয়া হয়। এ ছাড়া নাইট ভিশন চশমা, ম্যানপ্যাক পেয়েছিল আফগান সৈন্য। এর পাশাপাশি ২০১৭ সাল থেকে ২ বছরের বেশি সময় ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৭ হাজার মেশিনগান, যে কোনো রাস্তায় চলতে পারে এমন ৪ হাজার ৭০০টি হামভি গাড়ি এবং ২০ হাজারের বেশি গ্রেনেড সরবরাহ করেছে আফগান ন্যাশনাল সিকিউরিটি ফোর্সকে। এছাড়া বড়ো অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে দু’ হাজার সাঁজোয়া গাড়ি ও প্রায় ৪০টির কাছাকাছি বিমান-হেলিকপ্টার, যার মধ্যে রয়েছে ইউএইচ-৬০ ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার, স্ক্যান ইগলের মতো ছোটো ড্রোনও। বর্তমান পরিস্থিতিতে সে সবই এখন তালিবানের হাতে। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠতেই পারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি নিজের দেওয়া সমরাস্ত্র ধ্বংস করতে বিশেষ কোনো অভিযান চালাবে?
এই বিশাল অস্ত্রসম্ভার আফগানিস্তানে থেকে গেলে তা হবে ভারতীয় উপমহাদেশ সহ এই অঞ্চলের দেশগুলির পক্ষে চিন্তার বিষয়। আফগানিস্তান এই মুহূর্তে নিশ্চয়ই কোনো প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে না। দেশের মধ্যেকার বিভিন্ন গোষ্ঠী নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লেও এত বিপুল অস্ত্রসম্ভার ব্যবহার সম্ভব নয়। তাহলে এই অস্ত্রসম্ভার কোথায় যাবে? আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করার জন্য এই বিপুল অস্ত্রসম্ভার ব্যবহার করা অসম্ভব নয়। অর্থাৎ যাওয়ার বেলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় উপমহাদেশ সহ সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য স্থায়ী সমস্যার উপাদান ও উপকরণ রেখে যাওয়ার ব্যবস্থা করে যাচ্ছে।
গত দুই দশকে আফগানিস্তানের ভূ-তাত্ত্বিক সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন বৃহৎ শক্তি সম্ভবত সেই কারণে নতুন তালিবান প্রশাসনের প্রত্যক্ষ বিরোধিতা করছে না। বরং অনেকেই প্রচ্ছন্ন সমর্থন জানিয়েছে। আফগানিস্তানের মাটির গভীরে জমে থাকা মহার্ঘ সম্পদের দিকে সকলের নজর। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম তামার আকরিক জমা রয়েছে আফগানিস্তানের মাটির গভীরে। একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে আফগানিস্তানের ভূগর্ভস্থ তামা উত্তোলন ও নিষ্কাশনের দায়িত্ব পেয়েছে চীন। কাবুলের দক্ষিণে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আইন্যাক-এ খনি থেকে তামার আকরিক উত্তোলন ও নিষ্কাশনের প্রকল্প চীন চালু করে দিয়েছে। উৎপাদিত তামা সরাসরি চীনে চলে যায় অথবা অন্য কোনো দেশে রপ্তানি করা হয়।
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত আফগানিস্তান এখনও বিশ্বের দরিদ্রতম দেশের একটি। প্রায় চার কোটি মানুষের দেশ আফগানিস্তানের বেশিরভাগ মানুষই এখনও দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। অথচ এই দেশের মাটির নিচে জমা হয়ে রয়েছে বিপুল খনিজ সম্পদ। বর্তমানে অনুমান করা হচ্ছে তিন লক্ষ কোটি ডলার সমমূল্যের খনিজ সম্পদের ভাণ্ডার আফগানিস্তানের মাটির তলায় জমা রয়েছে।
সোনা, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস, নিকেল ছাড়াও লিথিয়াম, তামা আর কোবাল্টের মতো মূল্যবান খনিজের আধার আফগানিস্তান। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৩০ মিলিয়ন টন ব্যবহারযোগ্য তামার ভাণ্ডার মজুত রয়েছে। অনাবিষ্কৃত আরও ২৮ মিলিয়ন টন। যার মূল্য কয়েকশো বিলিয়ন ডলার। ২ বিলিয়ন টন লোহার আকরিক, ১.৪ মিলিয়ন টন রেয়ার আর্থ, ২ হাজার সাতশো কেজি সোনা মজুত আছে আফগানিস্তানে বলে অনুমান করা হয়।
গজনিতে আছে অতি মূল্যবান খনিজ লিথিয়ামের বিশাল ভাণ্ডার। ইলেকট্রিক গাড়ি, মুঠোফোন থেকে শুরু করে ব্যাটারিচালিত নানা প্রযুক্তিতেই কাজে লাগে লিথিয়ামভিত্তিক ব্যাটারি। এজন্য আফগানিস্তানকে ‘লিথিয়ামের সৌদি আরব’ আখ্যা দেওয়া হয়।আফগানিস্তানের এমন প্রযুক্তি ও প্রযুক্তিবিদ নেই যাতে অন্য কারো সাহায্য ছাড়াই দেশে খনি শিল্পের বিকাশ ঘটতে পারে। বিদেশি সংস্থা কাজ করতে চাইলে তালিবান নিজস্ব কট্টর মৌলবাদী মানসিকতা পরিত্যাগ করে খনি শিল্প স্থাপনের অনুমতি দেবে কিনা তা এই মুহূর্তে অনুমান করা সম্ভব নয়। তবে এ কথা নিশ্চিন্তে বলা যায় যে, আফগানিস্তানের খনিজ সম্পদ ব্যবহারের জন্য উন্নত বিদেশি শক্তিগুলি তালিবানের সঙ্গে সম্প্রীতির সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে। বাস্তবে কি হবে তার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।