ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টি’র ত্রয়োদশ কংগ্রেসে সিপিআই (এম)’র অভিনন্দনবার্তা
ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টি (কমিউনিস্ট পার্টি অব ভিয়েতনাম -সিপিভি)-র ত্রয়োদশ কংগ্রেসের সার্বিক সাফল্য কামনা করে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)। ১৪ জানুয়ারি পাঠানো ওই অভিনন্দন বার্তায় সিপিআই(এম) বলেছেঃ ‘‘আমরা জানি, সিপিভি’র ত্রয়োদশ কংগ্রেস আগামী পাঁচ বছরের কর্মসূচির পরিকল্পনা এবং বিগত কংগ্রেসে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের রূপায়ণের পর্যালোচনার সাথেই ‘দই মই’ নীতি রূপায়ণের ৩৫ বছর এবং জাতীয় পুনর্নিমাণ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক মঞ্চের বাস্তবায়নের ৩০ বছরের অভিজ্ঞতাও আলোচনা হবে। আলোচনার জন্য যে বিষয়গুলিকে তুলে ধরা হয়েছে তা এই কংগ্রেসের গুরুত্বকেই ইঙ্গিত করছে এবং সমাজতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণে এই কংগ্রেস তার পূর্বনির্ধারিত ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করবে।
বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতেও সিপিভি’র এই ত্রয়োদশ কংগ্রেসের তাৎপর্য রয়েছে। বর্তমান সময়ে সমগ্র বিশ্ব দ্বৈত প্রভাবে আন্দোলিত হচ্ছেঃ ১) বিশ্ব আর্থিক সঙ্কট যা বহু দেশের অর্থনীতিকে মন্দায় ফেলেছে এবং ২) কোভিড-১৯ ভূমারী যা বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশকে প্রভাবিত করেছে। এই ভূমারীর আঘাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনের মতো বহু উন্নত দেশ শত-হাজার প্রাণহানি সহ স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ার এবং পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সরকারগুলির অমানবিক সত্তা অনাবৃত হয়ে যাওয়ার সাক্ষী থেকেছে।
পুঁজিবাদী দেশগুলি আর্থিক সঙ্কটের দায়কে ভূমারীর উপর চালান করে দেবার চেষ্টা করছে। যেখানে বিশ্ব পুঁজিবাদী অর্থনীতি ২০০৮ সালের বিশ্ব আর্থিক মন্দার সাথে শুরু হওয়া সঙ্কট এখনো অতিক্রম করতে সক্ষম হয়নি। ভূমারী পরিস্থিতি এই সঙ্কটকে আরও জঘন্য করেছে। অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার প্রচেষ্টা হিসেবে তারা শ্রমজীবী মানুষের উপর বোঝাকেই বৃদ্ধি করে চলেছে। অন্যদিকে, এই দেশগুলির নাগরিকদের যা যা গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে তাও তারা বিভিন্নভাবে কাটছাঁট করে চলেছে। ভূমারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নামে এই সব দেশে বিরোধিতা ও প্রতিবাদসমূহকে শ্বাসরুদ্ধ করা হচ্ছে। ভিয়েতনাম বিশ্বের সেই মুষ্টিমেয় কিছু দেশের মধ্যে অন্যতম যে এই যমজ বিপদকে সাফল্যের সাথে মোকাবিলা করেছে। যখন বহু দেশই নেতিবাচক বিকাশ লিপিবদ্ধ করেছে, তখন ভিয়েতনাম সেই ১০টি দেশের মধ্যে অন্যতম যারা ধনাত্মক আর্থিক বিকাশ নথিবদ্ধ করেছে। ২০২০ সালে ভিয়েতনামের জিডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে ২.১ শতাংশ। এটা ছিল একটা অপূর্ব সাফল্য অর্জন, এবং তা সম্ভব হয়েছে সিপিভি’র হস্তক্ষেপের কারণে যারা ভিয়েতনামের জনগণ ও রাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। কর ও জমিভাড়া স্থগিত, সুদের হারে কাটছাঁট, ঋণ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা, জনগণের জীবনজীবিকাসমূহের সুরক্ষা প্রদান সুনিশ্চিত করা এবং জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে চাহিদা তৈরি করার মতো নীতিসমূহই এই নজিরবিহীন সময়ে আর্থিক বিকাশকে অব্যাহত রাখতে অবদান রেখেছে। এই অর্থনৈতিক নীতিসমূহ যা বিকাশকে এগিয়ে নিয়ে গেছে তা সম্ভব হয়েছে ভিয়েতনাম সরকার এবং সিপিভি’র দক্ষতা এবং তাদের প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে সফলভাবে কোভিড-১৯ ভূমারী নিয়ন্ত্রণের কারণেও। সিপিভি এবং ভিয়েতনাম সরকারের সক্রিয় হস্তক্ষেপের কারণেই এই ভূমারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশের জনগণকে সাফল্যের সাথে সমবেত করা গেছে। ফলস্বরূপ, ভিয়েতনামে মাত্র ১৫২০ জন কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৩৫ জন। এই পরিসংখ্যানই দেখিয়ে দিচ্ছে, সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার মহত্বকে, যেখানে যে কোনো কিছুর উপরে জনগণের জীবনকে স্থান দেওয়া হয়। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো যে, ভিয়েতনাম তিনটি দেশীয় ক্যান্ডিডেট ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করছে, যেগুলি ট্রায়ালের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে।
ভিয়েতনামের এই সাফল্য সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার উৎকৃষ্টতাকে এবং শোষণমূলক পুঁজিবাদী সামাজিক ব্যবস্থার বিপরীতে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের মানবিকবেত্তাকে প্রদর্শিত করছে।
কমরেডগণ,
আমাদের দেশ ভারত, সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বৃহৎ অর্থনৈতিক সংকোচনের সাক্ষী থাকছে। হাজার হাজার মানুষ তাদের জীবন-জীবিকা হারিয়েছেন। শ্রমিকশ্রেণি ও কৃষকদের অধিকারের উপর সুতীব্র আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়েছে। এই আক্রমণের বিরুদ্ধে আমাদের দেশের শ্রমিক শ্রেণি ও কৃষকরা এক ঐতিহাসিক সংগ্রামের মধ্যে রয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা রূপায়িত কর্পোরেটমুখী আইনের বিরুদ্ধে কৃষকরা রাজধানী দিল্লির চারিদিকে ৫০ দিনের বেশি সময় ধরে অবস্থান করছেন। সিপিআই(এম) সক্রিয়ভাবে কৃষক ও শ্রমিকশ্রেণির এই সংগ্রামগুলিকে সমর্থন করছে এবং এই শ্রেণিকর্মসূচিগুলির সংহতিতে জনগণের সমর্থনকে সমবেত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই প্রতিবাদগুলিকে খর্ব করতে, সেগুলিকে দানবীয় তুল্য করে উপস্থিাপিত করতে সরকারের স্বৈরাচারী আক্রমণসমূহ এবং সমস্তরকম বিরোধী কণ্ঠস্বরকে দমন করতে শক্তি ব্যবহারের বিরুদ্ধে আমাদের সমাজের বিস্তৃত অংশকে জড়ো করতেও সিপিআই(এম) চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রিয় কমরেড,
ভারত ও ভিয়েতনাম বন্ধুত্বের ঐতিহাসিক বন্ধন এবং গভীরে প্রোথিত সাংস্কৃতিক যোগসূত্রের অংশীদার। একইভাবে আমাদের দুই পার্টিও সংহতি এবং ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্কের শক্তিশালী বন্ধনের অভিমত পোষণ করে।
ত্রয়োদশ কংগ্রেস উপলক্ষে ফের আরেকবার আমরা সিপিভি’র এবং ভিয়েতনামের সমাজতান্ত্রিক নির্মাণের জন্য তার সৃজনশীল প্রচেষ্টার প্রতি সংহতি পুনরুচ্চারিত করছি। আমরা কংগ্রেসের সার্বিক সাফল্য কামনা করি এবং আমরা আত্মবিশ্বাসী, কংগ্রেসে যে সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হবে, তা স্বাস্থ্য, সুখ ও আরও সমৃদ্ধির দিকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমাদের স্থির বিশ্বাস যে, এই কংগ্রেস দুই পার্টির মধ্যে ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার পথ প্রস্তুত করবে। বিপ্লবী অভিনন্দন।