E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

হিন্দুত্ববাদীদের মহম্মদ সম্পর্কে অশালীন বক্তব্যে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

লালন ফকির


বিগত কয়েক মাস যাবত হিন্দুত্ববাদীদের একটা অংশের হজরত মহম্মদ সম্পর্কে কিছু অশালীন বক্তব্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কাছে বিষয়টি ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত বলেই মনে করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আলকায়দা ও ইসলামিক স্টেটস (আই এস) ঘোষণা করেছে, হজরত মহম্মদের সম্মান রক্ষার্থ তারা ভারতের বিভিন্ন জায়গায় আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। আইএস-এর আফগানিস্তানের শাখা সংগঠন এবং আইএসআইএস(কে) দাবি করেছে কাবুলে অবস্থিত একটি গুরুদ্বারের ওপর জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে যে আক্রমণ সংগঠিত করা হয়েছে তা হলো এরই প্রতিক্রিয়া। এই বিস্ফোরণে একজন শিখ ধর্মাবলম্বী ও একজন তালিবান সহ ৭ জন নিহত হয়েছেন।

হজরত মহম্মদ সম্বন্ধে বিজেপি’র মুখপাত্রের অপমানজনক উক্তির প্রতিবাদ করে ৫৭টি মুসলিম দেশ যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। কাতার সরকারের পক্ষ থেকে বিজেপি নেতার বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। কাতারের রাজধানীতে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের প্রধানকে ডেকে এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। কাতারের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারতবিরোধী বিক্ষোভও সংগঠিত হয়েছে।

লক্ষণীয় বিষয় হলো, এই সময়ে কাতারে উপস্থিত ছিলেন ভারতের উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডু। তাঁর সম্মানে পূর্বে আয়োজন করা ভোজসভা সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়। বিজেপি নেতৃত্বের এই অপমানজনক উক্তির প্রভাব ‘দ্য অর্গানেইজেশন অফ ইসলামিক কনফারেন্স’ (ওআইসি)-এর ওপরও পড়েছে। বিবৃতি দিয়ে তারা জানিয়েছে, “এধরনের ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। ভারতে মুসলিমদের ওপর যে অত্যাচার চলছে এ হলো তারই সম্প্রসারিত রূপ।” এসম্পর্কে তারা বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় পণ্য বয়কটের দাবি উঠেছে। পশ্চিম এশিয়া তথা মধ্য প্রাচ্যের কোনো কোনো দেশের পক্ষ থেকে ভারতে জ্বালানি তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি উঠেছে। প্রসঙ্গত, ভারতের সঙ্গে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির বিপুল পরিমাণ রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। এক তথ্যে দেখা যায়, ভারতে প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেলের অর্ধেকের বেশি আসে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলি থেকে। এর পরিমাণ হলো ভারতের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের ১০ শতাংশ। ভারতের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১ লক্ষ কোটি ডলার। ‘গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল’-এর সঙ্গে ভারতের ব্যবসাবাণিজ্য ক্রমবর্ধমান। এর পরিমাণ হলো ৪ হাজার ৪শ’ কোটি ডলার। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং সৌদি আরবের পক্ষ থেকে ভারতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। মধ্য প্রাচ্য সহ পশ্চিমি দেশগুলিতে ৯০ লক্ষের বেশি ভারতীয় শ্রমিক কর্মরত আছেন। প্রতি বছর তারা যে পরিমাণ অর্থ ভারতীয় কোষাগারে জমা দেন তার পরিমাণ ৩,৫০০ কোটি ডলার। এই অর্থ প্রদান বন্ধ হয়ে গেলে ভারতীয় কোষাগারের ওপর তা ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া হয়েছে সাংঘাতিক। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকায় ভারতবিরোধী বিক্ষোভ সংগঠিত হয়। মালদ্বীপে বর্তমানে ভারতবান্ধব সরকার প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু সেখানেও রাজধানী সহ অন্যান্য শহরে ভারতবিরোধী বিক্ষোভ সংগঠিত হয়েছে। মালদ্বীপ এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি সরকারিভাবে প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছে ভারত সরকারের কাছে। জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ভারত সরকার প্রথম এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলা হয়, সমগ্র বিষয়টিকে তারা মানবাধিকারের মাপকাঠিতে বিচার করছে। মুসলিম রাষ্ট্রগুলি ছাড়াও অমুসলিম দেশগুলিও এই ঘটনায় ভারতের পক্ষ নেয়নি।

এদেশে হিন্দুত্ববাদীদের উগ্র সাম্প্রদায়িকতাবাদী অবস্থান ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করছে। তেমনি অন্যদিকে আন্তর্জাতিক আঙিনায় ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক চরিত্রকে কালিমালিপ্ত করছে। দেশের অভ্যন্তরেও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলি এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। অবিলম্বে হিন্দুত্ববাদীদের এই আচরণ বন্ধ করতে হবে।